শনিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে, লিডিং ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এই দিনে গোটা বিশ্বকে অবাক করে মায়ের ভাষার জন্য রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল এদেশের সূর্য সন্তানরা। তাদের এই নিঃস্বার্থ আতœত্যাগেই আমরা পেয়েছি অমৃতসম মায়ের ভাষা, প্রণের ভাষা, গানের ভাষা, আবেগের ভাষা, বাংলা ভাষা। আমরা ভাষা আন্দোলনের সকল বীর সেনাদের স্মরণ করছি সশ্রদ্ধ চিত্তে। একই সাথে¦ একমাত্র মায়ের ভাষার জন্য যারা অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছে প্রাণ, যাদের জন্য অবাক গোটা বিশ্ববাসী সেই মহান শহীদদের আতœার মাগফেরাত কমনা করছি। আজ সারা বিশ্বে বাংলা ভাষাবাসীরা উদযাপন করবে এই দিবসটিকে।
একুশ আমাদের চেতনায়,একুশ আমার প্রেরণায়। একুশ আমার অহংকার,একুশ আমাদের অহংকার। কবির ভাষায়-“একুশ আমার ব্যাথায় কাতর চোখের বারিধারা,একুশ আমার শূণ্য হিয়ায় আকাশ ভরা তারা। একুশ আমার রক্ত রঙ্গিন কৃষ্ণ চূড়ার ডাল,একুশ আমার ঝাজরাঁ হওয়া চোট্ট ঘরের চাল। ভাষা আন্দোলনের গোড়ার কথা : ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখে যে ঘটনা ঘটেছিলো তা প্রতিটি বাঙালির হৃদয়কেই রক্তাক্ত করে। দ্বিজাতী তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট তারিখে পাকিস্তান রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। পূর্ব বাংলার মুসলমামনরা ছিল সংখ্যা গরিষ্ট। তাই পুর্ব বাংলাকে পাকিস্থানের অর্ন্তভুক্ত করা হয়।
বাংলা ভাষা এবং বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি চরম অবজ্ঞা পোষণ করে যে দিন হাতে নতুন শিকল পড়ানো হয় তার পরিনাম হয় মারাত্বক। পাকিস্তানের নব্য উপনিবেশ বাদী, ক্ষমতালিপ্সু, উদ্ধত শাসকরা শুরু থেকেই মানুষের উপর অত্যাচারের স্টিম রোলার চালাতে থাকে। প্রথমেই তারা ফন্দি আঁটে কিভাবে এদেশের মানুষের মুখের ভাষাকে কেড়ে নেওয়া যায়। এ অংশের মানুষকে বসে রাখার জন্য তারা বাংলাভাষা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং বাঙালিদের ঘাড়ে পাকিস্তানি সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার নীলনকশা রচনা করে। পাকিস্তানের রাষ্ট প্রধান মোঃ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসে এক সমাবেশের ঘোষনা দেন, “ঁৎফঁ ধহফ ঁৎফঁ ংযধষষ নব ঃযব ংঃধঃব ষধহমঁধমব ড়ভ চধশরংঃধহ ” কিন্তু এদেশের ছাত্র যুবকরা সে সমাবেশেই “ ঘড়, ঘড়, রঃ পধহদঃ” নব ধ্বনি তুলে তার উদ্ধতপূর্ণ ঘোষনার সমুচিত জবাব দেয়। প্রতিবাদের ভাষা এবং এর ব্যাপকতা ক্রমেই বাড়তে থাকে।
পাকিস্তানি সরকার সকল প্রতিবাকে পাশবিক শক্তি দ্বারা দমনের চেষ্টা চালায়। তাদের একপেশে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামে অবর্তীন হয় দেশের মানুষ। এদেশের দামাল ছেলেরা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য বজ্রকঠিন শপথ গ্রহণ করে। র্পূব বাংলার র্সবত্র ছড়িয়ে পড়ে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন। আন্দোলনের পুরোভাগে এসে দাঁড়ায় এদেশের ছাত্র ও যুবসমাজ। আন্দোলনে সংগ্রামে বাংলা ভাষাঃ একুশে ফেব্রুয়ারী তারিখে প্রতিবাদ সভা এবং মিছিল হবে তা আগেই ঘোষনা দেওয়া হয়েছিলো। পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করার জন্যে সরকার ১১ ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা আইন জারী করে। ২০শে ফেব্রুয়ারী রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্ররা গোপন বৈঠক করে এবং সিদ্ধান্ত হয় যেমন করে হউক তারা ১৪৪ লঙ্ঘন করবেই।
সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একুশে ফেব্রুয়ারীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে আহুত হয় ছাত্রদের প্রতিবাদ সভা। সভা শেষে তারা মিছিল বের করে। সেদিন ছাত্রসমাজের প্রতিবাদী কন্ঠে ধ্বনিত হয় স্বাধিকারের দাবি। প্রাদেশিক অধিবেশন বসেছিল সেসময়। ভাষার দাবিতে সোচ্চার মিছিলটি এগিয়ে যায় প্রাদেশিক ভবনের দিকে। মিছিলটি ছত্রভঙ্ঘ করার জন্যে পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের বেপরোয়া গুলি বর্ষনের ফলে রাজ পথে লুটিয়ে পড়ে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, সফিউল প্রমূখ দামাল ছেলেরা। বুকের তাজা রক্ত দিয়ে তারা লিখে যায় এক অনন্য ইতিহাস। তাদেঁর নিঃসৃত রক্তে সে দিন লেখা হয়ে যায় পুর্ববাংলার অমোঘ ভাগ্যলিপি। তাদের এ মহান আতœত্যাগের ফলেই বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার সম্মান লাভ করে। বাঙালির স্মৃতিতে ভাস্বর হয়ে থাকে সেই দিন, সেই রাজ পথ, সেই ফুলার রোড।