বুধবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৫

তালাক কি ? কি কি উপায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ হতে পারে ? স্বামী কি যখন খুশি তখন তালাক দিতে পারে ? এই ৯০ দিন অতিক্রান্ত হবার আগে কি তালাক প্রত্যাহার করা যাবে ? বিচ্ছেদ প্রাপ্ত স্বামী কি আবার আগের স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারে? স্ত্রী কীভাবে স্বামীকে তালাক দিতে পারে? তালাক-ই-তৌফিজ , খুলা , মোবারাত কি ? স্ত্রী কর্তৃক আদালতে আবেদন মাধ্যমে তালাক ? তালাক কখন কার্যকরী হয় না? স্ত্রী স্বামীকে কোট বা সালিসের মাধ্যমে তালাক দেয়ার অধিকার রাখে কি না? শরীয়তে এ ব্যাপারে হুকুম কি? পবিএ কোরআনে তালাক এর বিধান কি ?

তালাক কি ? কি কি উপায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ হতে পারে ? স্বামী কি যখন খুশি তখন তালাক দিতে পারে ? এই ৯০ দিন অতিক্রান্ত হবার আগে কি তালাক প্রত্যাহার করা যাবে ? বিচ্ছেদ প্রাপ্ত স্বামী কি আবার আগের স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারে? স্ত্রী কীভাবে স্বামীকে তালাক দিতে পারে? তালাক-ই-তৌফিজ , খুলা , মোবারাত কি ? স্ত্রী কর্তৃক আদালতে আবেদন মাধ্যমে তালাক ? তালাক কখন কার্যকরী হয় না? স্ত্রী স্বামীকে কোট বা সালিসের মাধ্যমে তালাক দেয়ার অধিকার রাখে কি না? শরীয়তে এ ব্যাপারে হুকুম কি? পবিএ কোরআনে তালাক এর বিধান কি ?
০ তালাক কি ?
তালাক
আরবি-তে 'তালাক' শব্দের অর্থ হল ত্যাগ করা , ছিন্ন করা , ছিন্ন করা। বিবাহ-চুক্তির মাধ্যমে স্থাপিত সম্পর্ক আইনসিদ্ধ উপায়ে ভেঙ্গে দেওয়াকে মুসলিম আইনে 'তালাক' বা বিবাহবিচ্ছেদ বলে। মুসলিম আইনে বিবাহবিচ্ছেদ নর-নারীর একটি বৈধ ও স্বীকৃত অধিকার। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক যদি এমন পর্যায় পৌঁছয় যে, একসঙ্গে থাকা তাঁদের একজন বা দুজনের পক্ষেই সম্ভব হয় না, সেক্ষেত্রে কয়েকটি নির্দিষ্ট উপায়ে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটানো যেতে পারে।
০ কি কি উপায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ হতে পারে?
(ক) স্বামীর পক্ষ থেকে তালাক;
(খ) স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাক, যদি স্বামী স্ত্রীকে তালাক-ই-তৌফিজের ক্ষমতা দান করে থাকেন;
(গ) খুলার মাধ্যমে;
(ঘ) মুবারাতের মাধ্যমে;
(ঙ) আদালতের মাধ্যমে;
০ স্বামী কি যখন খুশি তখন তালাক দিতে পারে?
মুখে পরপর তিনবার 'তালাক' উচ্চারণ করলে অথবা একসাথে 'বায়েন তালাক' কথাটি বললেই তালাক কার্যকরী হয় না। যদিও এই ভুল ধারণাটা এখনও অনেকের মধ্যে আছে এবং আমাদের দেশে স্বামীরা অহরহই মুখে মুখে তালাক দিয়ে থাকেন।
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭ (১) ধারা অনুযায়ী, স্বামী তালাক দেবার পরপরই তালাক দেবার সংবাদটি একটি নোটিশের মাধ্যমে চেয়ারম্যানকে (যে চেয়ারম্যানের এলাকায় স্ত্রী বাস করছেন) জানাতে হবে।সেই নোটিশের একটি কপি স্ত্রীকে পাঠাতে স্বামী বাধ্য। স্বামী যদি চেয়ারম্যান এবং স্ত্রীকে তালাকের নোটিশ না পাঠান, তবে ঐ একই আইনের ৭ (২) ধারা অনুযায়ে স্বামী এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা দশ হাজার টাকা জরিমানা অথবা অথবা দুটি দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন। নোটিশ পাবার ত্রিশ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পুনর্মিলন ঘটানোর উদ্দেশ্যে উভয়পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সালিশী পরিষদ গঠন করবেন এবং তাঁদের মধ্যে সমঝোতা আনার প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেবেন।
কিন্তু সালিশীতে যদি কাজ না হয় এবং নোটিশ দেবার ৯০ দিনের মধ্যে স্বামী যদি স্ত্রীকে দেওয়া নোটিশ প্রত্যাহার না করেন, তবে ৯০ দিন পরে তালাক কার্যকরী হবে। ৯০ দিন পার না হওয়া পর্যন্ত দম্পতিকে আইনসিদ্ধ স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই ধরা হবে এবং স্ত্রী ভরণপোষণও পাবে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ -এর ৭(১) নং ধারা অনুযায়ী - চেয়ারম্যান ও স্ত্রীকে নোটিশ না পাঠালে স্বামী শাস্তি পাবেন ঠিকই, কিন্তু তালাক বাতিল হবে না। তালাক কার্যকরী হবে। (সম্প্রতি একটি মামলায় (মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বনাম মোছা:হেলেনা বেগম ও অন্যান্য। সিভিল রিভিশন নং ৬৯৮, ১৯৯২) এ মর্মেই রায় দেওয়া হয়েছে।
০ এই ৯০ দিন অতিক্রান্ত হবার আগে কি তালাক প্রত্যাহার করা যাবে ?
হ্যাঁ, এই ৯০ দিন অতিক্রান্ত হবার আগে অবশ্যই তালাক প্রত্যাহার করা যাবে। এই সময়টা এইজন্যই রাখা হয়েছে যাতে করে স্বামী-স্ত্রী উভয়পক্ষই ঠাণ্ডা মাথায় সব কিছু ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন - পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে পারেন।
০ বিচ্ছেদ প্রাপ্ত স্বামী কি আবার আগের স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারে?
১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইন ৭ (৬) ধারা অনুযায়ী তালাকের মাধ্যমে কোন বিবাহবিচ্ছেদ ঘটলে, তালাক হওয়া দম্পতি আবার বিয়ে করতে চাইলে নতুন করে বিয়ে করতে হবে। তবে তার জন্য মধ্যবর্তী বা হিল্লা বিয়ের কোনো প্রয়োজন নেই।
(হিল্লা বিয়ে হল তালাক দেওয়া নারীকে প্রাক্তন স্বামী বিয়ে করতে চাইলে সেই নারীকে অন্তর্বর্তী কালে অন্য কোনো পুরুষকে বিয়ে করার পুরনো প্রথা। সেই প্রথা অনুযায়ী হিল্লা বিয়ের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়ে যাবার পর তাঁকে প্রাক্তন স্বামী আবার নিকাহ্ করতে পারবেন । ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের মাধ্যমে 'হিল্লা' নিকাহ্ বলে যে বিয়ে প্রচলিত ছিল, সেটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হিল্লা বিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনী কাজ। কেউ এ ধরণের বিয়ে ঘটানোর উদ্যোগ নিলে সরাসরি আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় খবর দেওয়া উচিত।)
স্ত্রী কীভাবে স্বামীকে তালাক দিতে পারে?
(১) তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে
(২) খুলার মাধ্যমে
(৩) মোবারাতের মাধ্যমে
(৪) আদালতে আবেদনের মাধ্যমে
(১) তালাক-ই-তৌফিজ কি?
তালাক-ই-তৌফিজ স্ত্রীর নিজস্ব ক্ষমতা নয়। স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেয়, তবে স্ত্রীও স্বামীর মতো তালাক দিতে পারে। সেক্ষেত্রে স্ত্রীকেও স্বামীর মতো তালাকের নোটিশ চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাতে এবং এক কপি স্বামীর কাছে পাঠাতে হবে। স্ত্রীর এই তালাক দেওয়ার ক্ষমতাকে তালাক-ই-তৌফিজ বলে।
নিকাহ্নামার ১৮ নং ঘরে "স্বামী স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করছে কি না? করে থাকলে কী শর্তে?" এই প্রশ্নটি থাকে। স্বামীর একতরফা ক্ষমতার কারণে স্ত্রীকে বহু নির্যাতন সহ্য করেও স্বামীর সাথে থাকতে হয়। ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইনে বর্ণিত শর্তগুলো (যেমন, নির্যাতন, নিরুদ্দেশ) না থাকলে এবং হুলার মাধ্যমে স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ না পেলে একটি মেয়ের পক্ষে বিয়ে থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব। সেক্ষেত্রে স্ত্রী অপেক্ষাকৃত কম জটিলতায় তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে মুক্তি পেতে পারে। তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম। নিকাহ্নামার ১৮ নং ঘরটি এজন্য অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পূরণ করা উচিত। অনেক সময় কাজীরা এ প্রশ্ন করেন না এবং ঘরটি শূন্য থাকে। কাজীদের অবশ্যই দুপক্ষকে দিয়ে ঘরটি সম্পর্কে অবগত করানো উচিত।
(২) খুলা বিচ্ছেদ কাকে বলে?
যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক বনিবনা ভাল না থাকে, তবে স্ত্রী অর্থ বা সম্পত্তির বিনিময়ে স্বামীকে বিচ্ছেদ ঘটাতে রাজী করাতে পারে। যেহেতু অধিকাংশ নারীর সম্পত্তি থাকে না অথবা সম্পত্তি থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা থাকে না, সেক্ষেত্রে স্ত্রী মোহরানা বা মোহরানার অংশ দিয়ে স্বামীকে তালাক দিতে রাজী করানোর চেষ্টা করতে পারেন।
(৩) মোবারাত কি ?
যে ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী, উভয়ই একে অন্যের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন এবং তাঁরা চুক্তির মাধ্যমে তাঁদের বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটান, তখন বলা মোবারাত। খুলার মত মোবারাতও এক ধরণের চুক্তি-ভিত্তিক বিবাহবিচ্ছেদ।
(৪) স্ত্রী কর্তৃক আদালতে আবেদন মাধ্যমে তালাক ?
১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইনের অধীনে স্ত্রী নিম্নোক্ত ৯টি কারণের যে কোনো এক বা একাধিকের ভিত্তিতে আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদ প্রার্থনা করতে পারেন:
(১) স্বামী ৪ বছরের অধিক সময় নিরুদ্দেশ থাকলে;
(২) দুই বছর যাবত্ স্ত্রীর খোরপোষ দিতে স্বামী ব্যর্থ হলে;
(৩) স্বামী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান লঙঘন করে অতিরিক্ত স্ত্রী গ্রহণ করলে;
(৪) স্বামী সাত বছর বা তার বেশি সময় কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে;
(৫) কোনো যুক্তি-সঙ্গত কারণ ছাড়া তিন বছর ধরে স্বামী তাঁর দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে;
(৬) স্বামী বিয়ের সময় পুরুষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা দায়ের করার সময়পর্যন্ত বজায় থাকলে;
(৭) স্বামী দুই বছর ধরে পাগল থাকলে অথবা মারাত্বক যৌনব্যধিতে আক্রান্ত থাকলে;
(৮) নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে হয়ে থাকলে অথবা সাবালকত্ব লাভের পর অর্থাত্ ১৮ বছর পূর্ণ হবার পর স্ত্রীর বিয়ে অস্বীকার করলে (কিন্তু এক্ষেত্রে স্বামীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে থাকলে এরকম মামলা দায়ের করা যাবে না)
(৯) নিম্নলিখিত যে কোনো অর্থে স্ত্রীর সাথে স্বামী নিষ্ঠুর আচরণ করলে:
(ক) যদি স্ত্রীকে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা;
(খ) কুখ্যাত মহিলাদের (women of ill reputation) সঙ্গে স্বামীর মেলামেশা করা কিংবা নৈতিকতা-বর্জিত জীবন যাপন করা।
(গ) নৈতিকতা-বর্জিত জীবন যাপনের জন্য স্ত্রীকে বাধ্য করা;
(ঘ) স্ত্রীর সম্পত্তি হস্তান্তর করা, কিংবা স্ত্রীকে তার সম্পত্তির বৈধ অধিকার প্রয়োগে দেওয়া;
(ঙ) স্ত্রীকে তার ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনে বাধা দেওয়া;
(চ ) যদি স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকে, তবে পবিত্র কোরানের নির্দেশে তাদের সাথে সমান ব্যবহার না করা;
তবে উপরোক্ত কারণগুলির ভিত্তিতে মামলা দায়ের করতে হলে স্ত্রীর কাছে সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকতে হবে।
০ তালাক কখন কার্যকরী হয় না?
গর্ভবতী অবস্থায় তালাক দিলে সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকরী হবে না। সন্তানের বৈধতা বা পিতৃত্ব নির্ধারণের জন্যই এ আইন তৈরি করা হয়েছে।
বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তান কার কাছে থাকবে?
বিবাহবিচ্ছেদের পর ছেলে সন্তান ৭ বছর পর্যন্ত ও মেয়ে সন্তান বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে। বাবা ভরণপোষণ দেবে। যদি বাবা দায়িত্ব পালন না করে, সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান সালিশী পরিষদের মাধ্যমে আলাপ আলোচনা করে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে পারেন।
০ স্ত্রী স্বামীকে কোট বা সালিসের মাধ্যমে তালাক দেয়ার অধিকার রাখে কি না? শরীয়তে এ ব্যাপারে হুকুম ঃ
উত্তর : শরীয়তের তালাক দেয়ার অধিকার একমাত্র স্বামীকে দেওয়া হয়েছে। স্ত্রীর জন্যে স্বামীকে তালাক দেয়ার কোন অনুমতি নাই। তবে স্বামী যদি স্ত্রীকে অধিকার দিয়ে থাকে স্ত্রী স্বামীর দেয়া ইখতিয়ার বা ক্ষমতা অনুয়ায়ী নিজের উপর তালাক গ্রহণ করতে পারবে। শরীয়তের পরিভাষায় একে তালাকে তাফবীজ বলা হয়। স্বামী যদি পুরুষত্বহীন হয় শরয়ী কোন দোষে দোষী প্রমাণীত হয়, যার ফলে স্ত্রী তার সাথে ঘর সংসার করতে অপারগ হয়, তাহলে স্ত্রী মুসলিম বিচারকের নিকট অতবা মুফতী বোর্ডের নিকট মামলা দায়ের করবে। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক অতবা মুফতী বোর্ড উপযুত্ত ব্যবস্তা গ্রহন করে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ করে দিবে। মোট কথা স্বামীর তালাক দেয়া ছাড়া্ও বিবাহ বিচ্চেদের আরো কয়েকটি পন্থা শরীয়ত অনুমোদন করেছে। কিন্তু স্তী স্বামীকে কোন অবস্তায়ই তালাক দিতে পারবে না। যদি দেয় তাহলে তা বেকার বলে গণ্য হবে। ঐ অবস্তায় স্ত্রী যদি অন্য কোথাও বিবাহ বসে তাহলে তদের সারা জীবনের মেলামেশা যিনা হিসাবে গণ্য হবে। (ফাতা্ওয়া দারুল উলুম : ৯/৪২, হেদায়া : ২/৩৭৬) (সংগৃহতি..)
০ পবিএ কোরআনে তালাক এর বিধান ;
সূরা তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ - ৬৫
১২ আয়াত, ২ রুকু, মাদানী
১। হে নবী ৫৫০৩ ! যখন তোমরা স্ত্রীদের তালাক দিতে চাইবে ৫৫০৪, তখন ইদ্দতকালের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দিও ৫৫০৫, এবং [ নির্ভুল ভাবে ] ইদ্দতকাল গণনা করবে এবং তোমার প্রভু আল্লাহকে ভয় করবে ৫৫০৬। তাদেরকে তাদের বাসগৃহ থেকে বের করে দিও না। স্পষ্ট অশ্লীলতার অভিযোগ ব্যতীত তারাও যেনো বের না হয় ৫৫০৭। এগুলিই হচ্ছে আল্লাহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত সীমারেখা এবং যে আল্লাহ্‌র এই সীমারেখা লংঘন করে সে [ নিজের ]আত্মার প্রতি অত্যাচার করে। তুমি জান না, হয়তো আল্লাহ্‌ এর পরে কোন উপায় করে দেবেন ৫৫০৮।
৫৫০৩। লক্ষ্য করুন এই আয়াতে নবীকে প্রথমে ব্যক্তিগতভাবে সম্বোধন করা হয়েছে উম্মতের শিক্ষক ও প্রতিনিধি হিসেবে। এর পরে উম্মতের জন্য নির্দ্দেশ দান করা হয়েছে। অর্থাৎ, " হে নবী ! উম্মতকে বলিয়া দাও " বাক্যটি যার দ্বারা আল্লাহ্‌ সমগ্র মুসলিম সমাজকে সম্বোধন করেছেন।
৫৫০৪। হাদীসে আছে আল্লাহ্‌র বিধান সমূহের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ আল্লাহ্‌র চক্ষে সর্বাপেক্ষা ঘৃণ্য। বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক সম্বন্ধে সাধারণ নির্দ্দেশ দেয়া হয়েছে [ ২ : ২২৮ - ২৩২, ২৩৬ -২৩৭ ; ২৪১ ] আয়াতে এবং [ ৪ : ৩৫ ] আয়াতে। দেখুন এসব আয়াত এবং তাদের টিকা সমূহ।
৫৫০৫। 'ইদ্দত ' মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদের সাথে শব্দটি জড়িত। দেখুন যা ব্যাখ্যা করা হয়েছে [ ২ : ২২৮ ] আয়াতে ও টিকা ২৫৪। সাধারণভাবে এর অর্থ হচেছ এক "নির্দ্দিষ্ট সময়কাল"।
৫৫০৬। 'ইদ্দত ' বা 'নির্দ্দিষ্ট সময়কাল " -কে নির্ধারণ করা হয়েছে, স্ত্রীর বা অজাত সন্তানের [ যদি থাকে] এবং প্রকৃতির যৌন বিধানের স্বার্থরক্ষার জন্য। আর এভাবেই সুশীল সমাজের প্রাথমিক বুনিয়াদ সৃষ্টি করা হয়েছে। অনেক তফসীরকারগণের মতে রজঃস্রাবকালে তালাক দেয়া বৈধ নয়। দেখুন [ ২ : ২২ ] আয়াত, অনুযায়ী বলা চলে যেহেতু সময়টি নারীর এক অপবিত্র অবস্থা এবং পুরুষের জন্য কাম্য নয়। সুতারাং স্বামী স্ত্রীর কোনও মতদ্বৈতকে সে সময়ে উত্থাপন করা উচিত নয়। বিবাহের ভিত্তি-ই হচ্ছে যৌন জীবন। সুতারাং বিবাহ বিচ্ছেদের সময়ে দৃষ্টিদেয়া প্রয়োজন যে এর সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের যেনো অবমাননা না করা হয়। তাড়িত হয়ে যেনো কোনও কাজ করা না হয়। আবেগ তাড়িত অনুভূতি হচ্ছে পশুর অনুভূতি। মানুষ পশু থেকে উন্নত কারণ সে পরিচালিত হয় বিবেক দ্বারা। তালাকের ন্যায় অপছন্দের কাজের সময়ে প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহ্‌র ভয়ে ভীত হয়ে বিবেকের দ্বারা পরিচালিত হয়ে প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
৫৫০৭। বৈবাহিক জীবনে ইসলাম মহিলাদের অধিকারের মূল্যদান করে। স্বামীর সম্পত্তি, বাড়ী প্রতিটি বস্তুতেই তার অধিকার ন্যায়সঙ্গত। বাড়ী অর্থ শুধুমাত্র বাসস্থানই নয়; এর অর্থ সেই বাড়ী পরিচালনার যাবতীয় খরচ, নারীর নিজের ও সন্তানদের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করা পুরুষের কর্তব্য। এই খরচ শুধু যে দাম্পত্য জীবন কালেই পুরুষ বহন করবে তা নয়, 'ইদ্দত' চলা কালেও তাকে বহন করতে হবে। এখানে নারীকে বলা হয়েছে তারাও যেনো এ সময়কালে বাড়ী থেকে চলে না যায়। কারণ 'ইদ্দত' চলা কালেও সমঝোতার সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকে, কিন্তু দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকলে সকল কিছুই ভিন্নরূপ ধারণ করতে পারে।
৫৫০৮। বিবাহ বিচ্ছেদ অপেক্ষা সমঝোতা সকল সময়েই কাম্য এবং উপযুক্ত পরিবেশে তা সম্ভবও হয়। দুপক্ষেরই অভিযোগ একটি পারিবারিক সভাতে উপস্থাপন করতে হবে, যেখানে উভয়দলের পারিবারিক সদস্য উপস্থিত থাকবেন। দেখুন [ ৪ : ৩৫ ] আয়াত। পারস্পরিক দৈহিক আকর্ষণ মন্দার মুখে, বিবাহ বিচ্ছেদের বা তালাকের উচ্চারণ করা উচিত নয় [ টিকা ৩৫০৬ ]। যখন তা উচ্চারণ করা হবে তখন তার জন্য নির্দ্দিষ্ট সময়কাল থাকবে সমঝোতার জন্য। দেনমোহর শোধ করতে হবে, নারীর উপযুক্ত ভরণ পোষণের বন্দোবস্ত থাকবে হবে। সব কিছুই করতে হবে নারীর অধিকার ও সমতার ভিত্তিতে। শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত সমঝোতার চেষ্টা করা প্রয়োজন। আবেগ বা ক্রোধের বশবর্তী হয়ে করা যে কোনও কাজকে বাধা দান করতে হবে, যেনো কেহ ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত না হয়। "হয়তো আল্লাহ্‌ এর পর কোন উপায় করে দেবেন।"
২। এরূপে, যখন তারা তাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করে, তোমরা তাদের হয় ন্যায়সঙ্গত ভাবে ফেরত নেবে, ৫৫০৯, অথবা ন্যায়সঙ্গতভাবে বিচ্ছেদ ঘটাবে। এবং তোমাদের মধ্য থেকে দুজন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী হিসেবে রাখবে। [ যেনো ] আল্লাহ্‌র সম্মুখে উপস্থিত এভাবে তারা সাক্ষ্য দেবে ৫৫১০। যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে ও শেষ বিচার দিবসকে বিশ্বাস করে, এটা হচ্ছে তার জন্য সর্তকবাণী। যারা আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তাদের জন্য নিষ্কৃতি পাওয়ার পথ করে দেবেন। ৫৫১১
৫৫০৯। দেখুন সূরা [ ২ : ২৩১ ] আয়াত। তালাক প্রক্রিয়ার সকল কিছুই যথাযথ সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে এবং উভয়পক্ষের অধিকার ন্যায়ের ভিত্তিতে বিবেচনা করতে হবে।
৫৫১০। 'ইদ্দত' শেষ হওয়ার পূর্বে স্ত্রীকে পুণরায় গ্রহণ করতে পারে। আর যদি ইদ্দত শেষ হয়ে যায়, তবে তাকে সামর্থ্য অনুযায়ী যথাযোগ্য মর্যদার সাথে বিদায় করতে হবে। সকল প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য, দুজন ন্যায়পরায়ণ লোক উভয় পক্ষ থেকে সাক্ষী হিসেবে কাজ করবেন, যেনো সমগ্র ব্যবস্থা স্বার্থপরতা ও অন্যায় দ্বারা সংঘটিত না হয়। প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত যে, সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সংঘটিত হবে ন্যায় ও সত্যের উপরে ভিত্তি করে। কারণ বিবাহ ও তালাক হচ্ছে আমাদের সমাজ জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্বরূপ যা আমাদের পারিবারিক জীবনকে প্রভাবিত করে। সুতারাং বিবাহ এবং তালাক আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনকেও প্রভাবিত করতে সক্ষম।
৫৫১১। বিবাহ বিচ্ছেদের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া এতটাই তিক্ততার সৃষ্টি করে যে, খুব বিবেকবান ব্যক্তির মধ্যস্থতাও সব সময়ে অন্যায় করা থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয় না। এ ক্ষেত্রেই আল্লাহ্‌র হুকুম হচ্ছে, " আল্লাহ্‌কে ভয় কর" এবং আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের আশায় সঠিক সাক্ষ্য বা কার্যটি গ্রহণ করবে। এরূপ ক্ষেত্রে " তিনি তাদের জন্য নিস্কৃতি পাওয়ার পথ করে দেবেন।" অচেনা অজানা স্থান থেকে যা সে ধারণাও করে নাই সেখান থেকে সাহায্যের হাত প্রসারিত হবে। চরম,শত্রুতা বন্ধুত্বে রূপান্তরিত হতে পারে। হয়তো বা শিশুর কান্না বা হাসি তিক্ত সম্পর্ককে পুণঃ প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, তিক্ততায় পরিপূর্ণ দুটি হৃদয় তাদের তিক্ততাকে দূর করতে পারে ইত্যাদি। আল্লাহ্‌র ই‌চছায় সাধারণ ঘটনার মাধ্যমে অসাধারণ কিছু ঘটে যেতে পারে। আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতা আত্মাকে পরিবেশের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়ে শান্তির আলয়ে পৌঁছে দিতে সক্ষম।
৩। তিনি তাকে ধারণাতীত [ উৎস ] থেকে জীবনোপকরণ দান করবেন। এবং কেউ যদি আল্লাহ্‌র উপরে বিশ্বাস স্থাপন করে, তার জন্য আল্লাহ্‌-ই যথেষ্ট। আল্লাহ্‌ অবশ্যই স্বীয় ইচ্ছা পূর্ণ করবেন ৫৫১২। অবশ্যই, সব কিছুর জন্য আল্লাহ্‌ স্থির করেছেন নির্দ্দিষ্ট মাত্রা।
৫৫১২। পৃথিবীর কর্মক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিবেশে আমরা মানসিক ভাবে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ি। ক্রোধ, বিরক্তি, হতাশা আমাদের অধৈর্য্য করে তোলে। মনে হয় সমগ্র পৃথিবী আমাদের জন্য বৈরী। বন্ধু, আত্মীয়, পরিচিত পরিবেশ সব কিছু তখন অসহনীয় ও হৃদয়হীন। এরূপ ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌ তাঁর উপরেই একমাত্র ভরসা করতে বলেছেন। মানুষ তো নিজের সম্বন্ধে অন্ধসম, সেতো তার নিজের দুর্বলতা এবং অক্ষমতা পরিমাপে অক্ষম। কিন্তু বিশ্ব বিধাতা সব জানেন, তিনি সর্বজ্ঞ। তাঁর বিশ্বব্যপী কল্যাণকর পরিকল্পনার আমরা এক ক্ষুদ্র অংশ। এবং সেই পরিকল্পনা কার্যকর হবেই। তাঁর নিয়ম নীতি সব কিছু ন্যায় এবং নির্দ্দিষ্ট মাত্রাতে বর্তমান। সেখানে কোনও অনিয়ম কেহ লক্ষ্য করতে পারবে না।
৪। তোমাদের যে সব স্ত্রীদের ঋতুমতী হওয়ার বয়েস অতিক্রম করে গেছে, এবং যাদের ঋতু এখনও হয় নাই, যদি তাদের ইদ্দতকাল সম্বন্ধে কোন সন্দেহ থাকে, তবে তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস ৫৫১৩। আর গর্ভবতী নারীদের জন্য ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ্‌ তার সমস্যার সমাধান সহজ করে দেবেন। ৫৫১৪
৫৫১৩। দেখুন সূরা [ ২ : ২২৮ ] আয়াত। তালাকের পূর্বে স্ত্রীর 'ইদ্দত' বা বিচ্ছিন্ন থাকার মেয়াদ কাল বর্ণনা করা হয়েছিলো তিন রজঃস্রাব কাল। কিন্তু যে সব স্ত্রীলোকের ঋতুমতী হওয়ার আশা নাই বা সন্দেহ থাকে তাদের জন্য ক্যালেন্ডারের তিনমাস ধার্য করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে পরিষ্কার ভাবে বোঝা যাবে যে উক্ত নারীগণ অন্তঃস্বত্তা কি না। যদি তারা অন্তঃস্বত্তা হয় সে ক্ষেত্রে ইদ্দতকাল হবে বাচ্চা প্রসব না করা পর্যন্ত।
৫৫১৪। দেখুন উপরের টিকা নং ৫৫১১। এখানে আল্লাহ্‌ ঘোষণা করেছেন যে, যদি কেউ প্রকৃতই অন্তর থেকে আল্লাহকে ভয় করে এবং আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের আশায় ন্যায়ের জন্য কাজ করে এবং এ কারণে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে দ্বিধা বোধ করে না, সেরূপ ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র সাহায্য অবশ্যাম্ভবী। তার জীবনের সকল বাধা বিপত্তি দূর হয়ে যাবে। তার সকল বাধা-বিপত্তি সত্য ও সুন্দরের স্পর্শে বৃহত্তর ও কল্যাণকর রূপে পরিসমাপ্তি লাভ করবে। আমাদের প্রিয় নবীর জীবনের মাধ্যমেও আমরা এই সত্যকে প্রতিভাত দেখি বারে বারে।
৫। এই হলো আল্লাহ্‌র বিধান যা তিনি তোমাদের প্রতি প্রেরণ করেছেন। যদি কেউ আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার থেকে দুর্ভাগ্য দূর করে দেবেন ৫৫১৫; এবং পুরষ্কার বৃদ্ধি করে দেবেন।
৫৫১৫। বিশ্ব জুড়ে আল্লাহ্‌র যে আইন তা কোনও অসংলগ্ন বা অযৌক্তিক কিছু নয়।আল্লাহ্‌র আইন তাঁর প্রত্যাদেশ কোরাণের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। এই বিধান সমূহ মানুষের জাগতিক ও পারলৌকিক কল্যাণের জন্য নিবেদিত। যদি আমরা একান্তভাবে আল্লাহ্‌র হুকুম সমূহ মেনে চলতে পারি। আল্লাহ্‌র জ্ঞান ও প্রজ্ঞার নিকট আত্মসর্মপন করতে পারি, তবে অচিরেই আমাদের সকল বাধা বিপত্তির অপসারণ ঘটবে। শুধু তাই-ই নয় আমাদের ব্যক্ত বা অব্যক্ত সকল মানসিক যন্ত্রণা দূরীভূত হয়ে যাবে। সুদক্ষ রাখাল যেরূপ তার মেষপালকে উর্বর শষ্যশ্যামল তৃণভূমির সন্ধান দানে এবং তথায় পরিচালিত করতে সক্ষম - আল্লাহ্‌ সেরূপ আমাদের মত অজ্ঞদের কল্যাণের পথে, মংগলের পথে পরিচালিত করতে সক্ষম। আল্লাহ্‌র পথে যত আমরা অগ্রসর হব, তত আমাদের চরিত্রে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, ন্যায়নীতির প্রকাশ ঘটবে, ফলে আত্মার মাঝে জন্ম নেবে অন্তর্দৃষ্টি, বিবেক ও দূরদর্শিতা। আল্লাহ্‌র এই পুরষ্কার চর্মচক্ষে দৃশ্যমান নয় কিন্তু যে তা লাভ করে সে অনুভব করে এর মূল্যমান। এ আত্মার এক অমূল্য সম্পদ।
৬। তোমরা তোমাদের সামর্থ অনুযায়ী যেরূপ জীবন যাপন কর, তাদেরও [ ইদ্দত কালে ] সেইরূপ জীবন ধারণের মান দিবে। সংকটে ফেলার জন্য তাদের উত্ত্যক্ত করবে না ৫৫১৬। যদি তারা গর্ভবতী হয়ে থাকে, তাহলে ৫৫১৭, সন্তান প্রসব পর্যন্ত তাদের জন্য ব্যয় করবে। এবং যদি তারা তোমাদের [ সন্তানদের ] স্তন্য পান করায়, তবে তাদের পারিশ্রমিক দেবে। [ সন্তানের কল্যাণ সম্পর্কে] তোমরা নিজেদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত ভাবে পরস্পর পরামর্শ করবে। আর যদি তোমরা তা কষ্টকর মনে কর ৫৫১৮ তবে অন্য স্ত্রীলোক [ শিশুকে ] তার [ পিতার ] পক্ষে স্তন্য দান করবে ৫৫১৯।
৫৫১৬। দেখুন টিকা ৫৫০৭। মানুষ জন্মগত ভাবে স্বার্থপর। একজন স্বার্থপর লোক সাধারণভাবে মনে করতে পারে যে, প্রকৃত তালাকের পূর্বে, ইদ্দত পালন করার সময়ে, স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য সঠিক ভাবে পালনের প্রয়োজন নাই। সুতারাং সে ঔদ্ধত্য অহংকারে অসহায় নারীর প্রতি দুর্ব্যবহার করতে পারে এবং তার প্রাপ্য আহার ও বাসস্থানের সুবন্দোবস্ত নাও করতে পারে। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ ঘোষণা করেছেন যে, পুরুষ তার নিজ জীবনযাত্রার মান অনুযায়ী ইদ্দত পালনকারী নারীর ভরণপোষণ করবে, এমন তো হতে পারে যে, আল্লাহ্‌ হয়তো তাদের পূণর্মিলন ঘটিয়ে দেবেন। আর যদিও বা তাদের পূণর্মিলন নাও ঘটে, তবুও বিচ্ছেদ যেনো তিক্ততার সৃষ্টি না করে, সম্মানজনকভাবে হয় সেটাই আল্লাহ্‌র কাম্য।
৫৫১৭। 'ইদ্দত' পালনের সময় কালে যদি বুঝা যায় যে, নারী গর্ভবতী সে ক্ষেত্রে 'ইদ্দত ' পালনের সময় তিন মাসের পরিবর্তে সন্তানের জন্মদান পর্যন্ত বিলম্বিত হবে। নূতন অতিথির আগমন পিতা মাতার মধ্যে মিলনের বন্ধন গড়ে তুলতে সক্ষম হতেও পারে। মোট কথা সন্তান জন্মগ্রহণের পূর্বে চূড়ান্ত বিবাহ বিচ্ছেদ সম্ভব নয়। আল্লাহ্‌ চান পুরুষ নারীর মাঝে পবিত্র বন্ধন যা বিবাহের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় তা যেনো হঠকারীতার মাধ্যমে ছিন্ন হয়ে না যায়। যদি সন্তান জন্মের পরও পিতামাতার মাঝে পূনঃ সর্ম্পক স্থাপন সম্ভব না হয়, নবজাতকের শুভ আগমনও যদি তাদের মাঝে তিক্ততা দূর করতে সক্ষম না হয়,তবে বিবাহ বিচ্ছেদের পরেও সন্তানের কল্যাণের জন্য মাতৃদুগ্ধ পান করার সম্পূর্ণ সময়টি পিতাকে মাতার ভরণপোষণ করার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। এই দায়িত্ব হচ্ছে পিতার প্রতি আরোপিত কর্তব্য। তালাকপ্রাপ্ত নারী সন্তানকে দুগ্ধ পান করাতে বাধ্য নয়, যদি সে পান করায় তবে পারিশ্রমিক নিতে পারে। ব্যাপারটি হবে পরস্পরের সমঝোতার মাধ্যমে। তবে এ ব্যাপারে তাদের উভয়ের মনোভাব এমন হওয়া উচিত নয় যাতে সন্তান মাতৃদুগ্ধ হতে বঞ্চিত হয়।
৫৫১৮। "তোমরা যদি তা কষ্টকর মনে কর।" এই বাক্যটি ইংরেজীতে অনূদিত হয়েছে এ ভাবে, "If ye find yourself in difficulties ." মাতৃদুগ্ধ সন্তানকে না দেবার অনেক কারণই ঘটতে পারে যথাঃ দুগ্ধের অপ্রাচুর্য, বা মাতা

মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৫

এজাহার বা F I R সম্পকে আলোচনা

এজাহার বা F I R ?
অপরাধীর শাস্তি দাবী করে বা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবীতে থানায় সরাসরি অপরাধের
সংবাদ লিপিবদ্ধ করাকে বলে এজাহার৷যা FIR নামেও পরিচিত। FIR হলো First Information Report
বাংলায় প্রাথমিক তথ্য বিবরণী । এ বিবরণটা প্রথম দেয়া হয় বলে একে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী বলে।
ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় এজাহার সম্পর্কে বলা হয়েছে – কোন থানার ভারপ্রাপ্ত
অফিসারের নিকট কোন অপরাধ সংঘঠিত হওয়া সম্পর্কে কোন সংবাদ মৌখিকভাবে প্রদান করা হলে
তিনি সাথে সাথে তা লিখে তথ্য প্রদানকারীকে পড়ে শুনাবেন এবং তার স্বাক্ষর নিবেন৷ লিখিতভাবে
প্রদত্ত সংবাদেও তথ্য প্রদানকারী স্বাক্ষর করবেন। এই তথ্য বিবরণী উক্ত
অফিসার, সরকার কর্তৃক নির্দেশিত ফরমে লিপিবদ্ধ করবেন। এটাই এজাহার বা প্রাথমিক
তথ্য বিবরণী নামে পরিচিত। এজাহার যেভাবে দায়ের করবেন ফৌজদারী কার্যবিধি ১৫৪ ধারা অনুসারে
আমলাযোগ্য অপরাধের বাদ পাওয়া গেলে তা নির্ধারিত ফরম অনুসারে রক্ষিত রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে৷ আমলাযোগ্য অপরাধের সংবাদ মৌখিকভাবে দেয়া হলে তা লিপিবদ্ধ করে সংবাদ
দাতাকে পাঠ করে শুনাতে হবে এবং
তাতে তার স্বাক্ষর নিতে হবে।
এজাহার গ্রহণে করণীয়
বিষয়াবলী পুলিশ রেগুলেশন
বেঙ্গল (পিআরবি) ১৯৪৩ এর ২৪৩
প্রবিধান এবং ফৌজদারী কার্যবিধির
১৫৪ ধারায় এজাহার,
এজাহারের শর্তাবলী বর্ণিত হয়েছে
তা নিম্নে তুলে ধরা হলো :
(১) আমলযোগ্য অপরাধের সংবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপি ২৭ ফরমে লিপিবদ্ধ করবেন।
(২) এজাহার হলো জিআর (জেনারেল রেজিস্টার) বা পুলিশী মামলার
ভিত্তি। এখান থেকেই জিআর মামলার
জন্ম হয় তাই আমলাযোগ্য কোন অপরাধের
সংবাদ পাবার সাথে সাথে
ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৭ ধারার
অধীনে তদন্ত আরম্ভ করতে হবে।
(৩) আমলযোগ্য অপরাধের সংবাদ শুনে
অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য
পুলিশ অফিসার এফআইআর গ্রহণ হতে
বিরত থাকতে পারবেন না (পিআরবি
২৪৩(চ) প্রবিধান)।
(৪) ডাক্তারী সার্টিফিকেট না
পাওয়ার কারণে এজাহার বিলম্বিত
করা যাবে না।
(৫)সংবাদাতা সংবাদটি
লিখিতভাবে দিতে না চাইলৈ বা
তা লেখা হলে তাতে সে
স্বাক্ষর দিতে না চাইলে সংবাদটি
জিডিভূক্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
(৬) টেলিফোনে কোন
আমলযোগ্য ঘটনার সংবাদ পাওয়া
গেলে সংবাদদাতাকে থানায় এসে
এজাহার দায়েরের জন্য বলতে
হবে, সংবাদদাতা না এলে
সংবাদ গ্রহণকারী অফিসার
নিজেই বিষয়টি এফআইআর করে ব্যবস্থা
নিবেন।
(৭) যার সম্পত্তিতে অপরাধ সংঘটিত
হয়েছে বা যার উপর আঘাত হয়েছে
তিনি এজাহার দিবেন তবে আমলযোগ্য
অপরাধের বিষয় যে কেউ এজাহার
দিতে পারেন।
(৮) অপরাধ সংঘটনের সংবাদটি কোন
আমলযোগ্য ঘটনার না হলে সে
সংবাদের ভিত্তিতে কোন এজাহার
নয়, জিডি এন্টি করে ব্যবস্থা নিতেহ
হবে, সংবাদদাতা অনেক
কারণেই স্বাক্ষর দিতে নাও চাইতে
পারে সে জন্য কার্যক্রম বন্ধ রাখা
যাবে না।
(৯) পুলিশ কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে
কনস্টেবলও এজাহার গ্রহণ করতে
পারবেন।
(১০) ম্যাজিস্ট্রট আমলযোগ্য কোন অপরধা
তদন্ত করার জন্য পুলিশকে
নির্দেশ দিলে ম্যাজিস্ট্রেটের
প্রেরিত লিখিত খবরই পুলিশ কর্মকর্তা
এজাহারে গণ্য করে ব্যবস্থা নিবেন।
(তথ্যসূত্র: পিআরবি ২৪৫ প্রবিধি এবং 47
DL R 94)
(১১) আমল অযোগ্য ঘটনার
তদন্ত ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ছাড়া
করতে পারবেন না।
(১২) এজাহার আদালতে আসার সঙ্গে
সঙ্গেই কোর্ট অফিসার তা
ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট পেশ করবেন।
(১৩) এজাহারের কপি হবে ৫টি, এর মূল
কপি কোর্টে প্রেরণ করতে হবে।
(১৪) প্রথম কার্বন কপি যাবে পুলিশ সুপার
এর নিকট।
(১৫) দ্বিতীয় কার্বন কপি থাকবে
থানায়।
(১৬) সাদা কাগজে অতিরিক্ত কপি
যাবে সার্কেল সহকারী পুলিশ
সুপারের নিকট।
(১৭) সাদা কাগজে অতিরিক্ত কপি
পাবে এজাহারদাতা। এজারের
শর্তাবলী
(১) এজাহারে উল্লেখিত অপরাধটি
হবে আমলযোগ্য ;
(২) সংবাদটি বিস্তারিত না হল ও তা
গ্রহণযোগ্য হবে ;
(৩) সংবাদটি লিপিবদ্ধ করতে হবে ;
(৪) লিপিবদ্ধ সংবাদের
উপর সংবাদাতাকে স্বাক্ষর করতে হবে
;
(৫) নির্ধারিত ফরমে
(বিপি-২৭) সংবাদটি লিপিবদ্ধ করতে
হবে ;
(৬) সংবাদ লিপিবদ্ধ করার পর তা
সংবাদদাতাকে পাঠ করে শুনাতে
হবে।
এজাহারের সাক্ষ্যগত মূল্য এজাহার
যেহেতু কোন অপরাধ সংঘটনের পর পরই
দায়ের করা হয়, তাই এজাহার হলো ঘটে
যাওয়া ঘটনার একটি বাস্তব চিত্র।
কিন্তু এজাহার প্রায়ই ঘটনার
প্রত্যক্ষদর্শী লিখেন না
অর্থাত্ এজাহারদাতা নিজে না
লিখে অন্য কাউকে দিয়ে
লেখান যিনি ঘটনা দেখেননি, তিনি
এজাহার লিখতে গিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ
তথ্য এলোমেলো করে
ফেলেন এজাহার একটি লিখিত
দালিলিক সাক্ষ্য আর এ
কারণেই এজাহারদাতা কিংবা
এজাহার গ্রহীতা এ দু’জনের
অন্তত একজনকে মামলার সাক্ষ্য পর্বে
আদালতে এসে সাক্ষ্য দিয়ে তা
প্রমাণ করতে হয়৷ অন্যথায় মামলা দুর্বল
হয়ে যায়।সাক্ষ্য আইনের ১৪৫ ধারা
অনুসারে এজাহারকে
সাক্ষীর সাক্ষোর সত্যতা কিংবা
অসংগতি প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা হয়৷
তাই এজাহার হতে হবে পূর্ণাঙ্গ, একটি
পূর্ণাঙ্গ এজাহারের বৈশিষ্ট্য নিম্নরুপ :
একটি পূর্ণাঙ্গ এজাহারের বৈশিষ্ট্য :
(১) অপরাধীর নাম ও ঠিকানা (জানা
থাকলে) সুস্পষ্ট হওয়া;
(২) অপরাধের বর্ণনা যৌক্তিকভাবে
লিপিবদ্ধ করা;
(৩) অপরাধ সংঘ্টনের তারিখ ও
সময় উল্লেখ করা;
(৪) অপরাধের ঘটনাস্থল (পিও) উল্লেখ
করা;
(৫) অপরাধ সংঘটনের কোন পূর্ব সূত্র বা
কারণ থেকে থাকলে তার বর্ণনা তুলে
ধরা;
(৬) সন্ধিগ্ধ ব্যক্তিদের সম্পর্কে ধারণা
দেয়া;
(৭) অপরাধ পরবর্তী অবস্থা
যেমন সাক্ষীদের আগমন, আহত
ব্যক্তির চিকিত্সা ইত্যাদি সম্পর্কে
বর্ণনা;
(৮) অপরাধীদের কেহ বাঁধা দিয়ে
থাকলে তার ধারাবাহিক বর্ণনা করা;
(৯) কোন বিষয় তাত্ক্ষনিক ভাবে
লেখা সম্ভব না হলে পরবর্তীতে সে
বিষয়টি সংযোজন করা হবে এমন একটি
কৈফিয়ত এজাহারে রাখা৷
(১০) এজাহারে কোন ঘষা-
মাজা, কাটা-কাটি করা উচিত না৷
এজাহারের নমুনা:
বরাবর
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
সাভার থানা, সাভার, ঢাকা৷
বিষয়: মামলার এজাহার
দায়ের প্রসঙ্গে।
বাদী: আয়াছ আলী (৪৫),
পিতা-মৃত
আশাক আলী, সাং-…
উপজেলা-
সাভার, জেলা-ঢাকা
বিবাদী : (১) কালু মিয়া (৩৪),
পিতা-সাফাত মিয়া ;
(২) ফালু মিয়া (৩৮), পিতা-ঐ ;
(৩) বাবলু (২৭), পিতা-
আক্কাছ মোল্লা ;
সাক্ষী : (১) সুরুজ মিয়া (৫৬),
পিতা- আবু আব্বাস ;
(২) আলতাফ আলী (৫০), পিতা-
সোয়া মিয়া ;
(৩) মঙ্গল বেপারী (৬০), পিতা-
আপ্তা বেপারী ;
(৪) মুজাম্মেল আলী
(৪০), পিতা-কোরবান আলী ;
(৫) মকদ্দছ (৪১), পিতা-আছদ্দর ;
(৬) বশির আলী (৩৫), পিতা –
রকিব আলী ;
সর্ব সাং-… উপজেলা-সাভার,
জেলা-ঢাকা।
ঘটনার তারিখ ও সময় :
০২-০১-২০০৫
রোজ শুক্রবার, সকাল অনুমান
১১.৩০ মিঃ
ঘটনাস্থল : সাক্ষী
মোজাম্মেল আলীর বসত বাড়ির
সামনের রাস্তার উপর।
মহোদয়,
আমি নিম্ন স্কাক্ষরকারী
আয়াছ আলী অদ্য ০২-০১-২০০৫
তারিখ অনুমান ১.৪৫ মিঃ এর
সময় আপনার থানায় সাক্ষী
আলতাফ আলী ও বশির আলীসহ
হাজির হয়ে এ মর্মে লিখিত
এজাহার দায়ের করছি যে,
উপরোক্ত বিবাদীদের সঙ্গে
আমার পরিবারের
সদস্যদের জমি-জমা নিয়ে দীর্ঘ
দিন যাবত মনোমালিন্য চলছে
সে আক্রোশে
উপরোক্ত বিবাদীগণ উপরে
বর্ণিত তারিখ ও সময়ে আমি
বাড়ি হতে সজিনা
বাজারের দিকে
যাওয়ার পথে সাক্ষী
মোজাম্মেল আলীর বাড়ীর
সামনের রাস্তায় পৌছা মাত্র
হঠাত্ গাছের আড়াল হতে
দৌড়ে এসে আমার উপর বল্লম ও
লাঠি দিয়ে আক্রমন করে৷১ নং
বাদী তাঁর হাতে থাকা বল্লম
দিয়ে আমার পেট লক্ষ্য করে
ঘাই মারে আমি উক্ত ঘাই ডান
হাত দিয়ে ফিরানোর
চেষ্টা করি এতে আমার
ডান হাতে মারাত্বক
রক্তাক্ত কাটা জখম হয়।আমি
চিত্কার দিয়ে মাটিতে পড়ে
গেলে ৩ নং আসামী আমাকে
লাঠি দিয়ে বেদম মারপিট
করতে থাকে।২ নং আসামী
আমার পকেটে থাকা
১০,২২০ টাকা নিয়ে যায়৷১ নং আসামী আমাকে লাথি মারতে মারতে পাশের খালের দিকে ফেলে দিতে থাকে এই সময় ৩ নং আসামী বলে শালার বেটাকে প্রাণে মেরে ফেল।এ সময় সাক্ষী মোজাম্মেল আলী বাড়ি হতে বের হয়ে আসে এবং ঘটনা
দেখে চিত্কার দিয়ে বলে আরে কে কই আছস তাড়াতাড়ি আয় আয়াছরে মাইরা হালাইলো৷মোজাম্মেলের চিত্কার শুনে আরো লোকজন ছুটে আসতে শুরু করলে আসামীরা লাঠি ও বল্লম নিয়ে তাদের
বাড়ির দিকে হেটে চলে যায়। আসামীরা চলে যাওয়ার পর আশ পাশের অনেক লোক এবং
সাক্ষীগণ আসে যাদের অনেকেই সামীদের ভয়ে আদালতে গিয়ে সাক্ষী দিতে
সাহস করেনি বলে মামলায় তাঁদের সাক্ষী মানা হয়নি, তবে তাঁদেরকে গোপনে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরাও সাক্ষী দিবে৷পরে ১ ও ২ নং সাক্ষী আমাকে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন৷ডাক্তার প্রাথমিক চিকিত্সা করে এক্সরেসহ আরো উন্নত চিকিত্সা গ্রহণ করার পরামর্শ
দেয়ায় আমি ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার সময় এ এজাহার দায়ের করতে সাক্ষীদের সহায়তায় থানায়
আসি৷সাক্ষীদের ঘটনা বিস্তারিত বলেছি যা তদন্তে প্রকাশ পাবে, আমার চিকিত্সার প্রাথমিক কাগজপত্র সংযুক্ত করে দিলাম৷ডাক্তারী সনদ পরে দাখিল করবো। অতএব উল্লেখিত আসামীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রার্থনাসহ অত্র এজাহার দাখিল করলাম৷আমি আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় আমার কথা মতো আমার এলাকার জনাব বশির আলী এই এজাহার লিখে আমাকে পাঠ করে শুনালে আমি তা শুদ্ধ স্বীকারে নিজ নাম দস্তগত করলাম।

এসিড নিক্ষেপ

এসিড নিক্ষেপ
যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির উপর এসিড নিক্ষেপ করেন বা করবার চেষ্ট করেন তা হলে তার এধরণের কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক বা অন্য কোনভাবে কোন ক্ষতি হোক বা না হোক তিনি অনধিক সাত বৎসর কিন্তু কম পক্ষে তিন বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অনূর্ধ্ব পঞ্চাশ হাজার টাকার অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন। যদি কোন ব্যক্তি এসিড নিক্ষেপে সহায়তা করেন এবং সেই সহায়তার ফলে ঐ অপরাধ সংঘটিত হয় বা অপরাধটি সংঘটনের চেষ্টা করা হয় তা হলে ঐ অপরাধ সংঘটনের জন্য বা অপরাধটি সংঘটনের চেষ্টার জন্যও নির্ধারিত দণ্ডে সহায়তাকারী ব্যক্তি দণ্ডনীয় হবে

মুসলিম আইনে সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নিয়ে আলোচনা ?

মুসলিম আইনে সম্পত্তিতে নারীর
অধিকার
আধুনিক সমাজে এখনো নানা ক্ষেত্রে
বঞ্চিত হচ্ছে নারীরা। আর এসব বঞ্চনার
মধ্যে পরিবারের সম্পত্তির অধিকার
থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা অন্যতম।
সমাজ ব্যবস্থার পরির্বতনে এখনো অনেক
নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে
পুরোপুরি সচেতন নয়। গ্রামে এখনো
অনেক নারী উত্তরাধিকার সূত্রে
প্রাপ্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সাধারণত মুসলিম আইন অনুযায়ী বাবার
সম্পত্তিতে একজন ছেলে সন্তান যে
সম্পদের ভাগ পায়, কন্যা সন্তান তার
অর্ধেক ভাগ পায়। বাবা ছাড়াও অন্য
সম্পর্ক থেকেও নারীরা সম্পত্তির ভাগ
পেয়ে থাকে। এসব বিষয় নিয়েই
আমাদের আজকের আয়োজন।
দেনমোহরের অধিকার
মুসলিম আইন অনুযায়ী একজন মুসলিম
নারী বিয়ের পর স্বামীর কাছ থেকে
দেনমোহর বাবদ একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের
অর্থ পেয়ে থাকে। যা স্বামীকে
অবশ্যই বিয়ের আগে অথবা বিয়ের পরে
পরিশোধ করতে হয়। অন্যথা স্ত্রী তা
যেকোনো সময় আইন অনুযায়ী আদায়
করতে পারবে। কোনো কারণে স্বামী
জীবিত অবস্থায় পরিশোধ করে যেতে
না পারলে তার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি
থেকে তা পরিশোধ করতে হয়।
ভরণ পোষণের অধিকার
মুসলিম আইন অনুযায়ী নারীদের
যাবতীয় খরচের দায়-দায়িত্ব পুরুষের
ওপর বর্তায়। পুত্রসন্তান উপার্জনক্ষম হলে
তার ওপর সংসারের যাবতীয়
দায়দায়িত্ব এসে পড়ে। আর সে যখন
স্বামী তখন তাকে স্ত্রীর ভরণপোষণ
দিতে হয়, সে যখন বাবা তখন তাকে
তার ছেলেমেয়েদের ভরণপোষণ দিতে
হয় এবং মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা
করতে হয়। যখন সে ভাই তখন ছোট
ভাইবোনদের ভরণপোষণ এবং
অবিবাহিত বোনদের বিয়ের ব্যবস্থা
করতে হয়। এ ছাড়া আমাদের দেশে মা-
বাবার ভরণপোষণ নিয়ে আলাদা আইনও
রয়েছে। ইসলাম ধর্মে এসব দায়দায়িত্ব
থেকে নারীকে অব্যাহতি দিয়ে শুধু
তা পুরুষের ওপরই অর্পণ করা হয়েছে।
বিপরীতে কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে
এসব দায়িত্ব পালন ঐচ্ছিক ব্যাপার। সে
এসব দায়িত্ব পালন করতে না পারলে
তাকে বাধ্য করা যাবে না।
উত্তরাধিকারীর ক্ষেত্রে
একজন পুরুষ উত্তরাধিকারসূত্রে মা-
বাবার সম্পত্তি থেকেই অংশ পায়।
একজন নারী সন্তান হিসেবে মা-
বাবার কাছ থেকে, স্বামী মারা
গেলে স্ত্রী হিসেবে স্বামীর কাছ
থেকে, মা হিসেবে সন্তানের কাছ
থেকে সম্পত্তির অংশ পায়। সব অংশ
যোগ করলে এবং উল্লিখিত সব দিক
বিবেচনা করলে নারীর অংশের
সম্পত্তি, মা-বাবার কাছ থেকে
পাওয়া পুরুষের অংশের সম্পত্তির চেয়ে
বেশিই হয়।
"মুসলিম আইনে সম্পত্তিতে নারীর
অধিকার আধুনিক সমাজে এখনো নানা
ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছে নারীরা। আর
এসব বঞ্চনার মধ্যে পরিবারের সম্পত্তির
অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা
অন্যতম। সমাজ ব্যবস্থার পরির্বতনে এখনো
অনেক নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে
পুরোপুরি সচেতন নয়। গ্রামে এখনো
অনেক নারী উত্তরাধিকার সূত্রে
প্রাপ্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সাধারণত মুসলিম আইন অনুযায়ী বাবার
সম্পত্তিতে একজন ছেলে সন্তান যে
সম্পদের ভাগ পায়, কন্যা সন্তান তার
অর্ধেক ভাগ পায়। বাবা ছাড়াও অন্য
সম্পর্ক থেকেও নারীরা সম্পত্তির ভাগ
পেয়ে থাকে। এসব বিষয় নিয়েই
আমাদের আজকের আয়োজন।
দেনমোহরের অধিকার মুসলিম আইন
অনুযায়ী একজন মুসলিম নারী বিয়ের পর
স্বামীর কাছ থেকে দেনমোহর বাবদ
একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ পেয়ে
থাকে। যা স্বামীকে অবশ্যই বিয়ের
আগে অথবা বিয়ের পরে পরিশোধ
করতে হয়। অন্যথা স্ত্রী তা যেকোনো
সময় আইন অনুযায়ী আদায় করতে পারবে।
কোনো কারণে স্বামী জীবিত
অবস্থায় পরিশোধ করে যেতে না
পারলে তার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি
থেকে তা পরিশোধ করতে হয়। ভরণ
পোষণের অধিকার মুসলিম আইন অনুযায়ী
নারীদের যাবতীয় খরচের দায়-
দায়িত্ব পুরুষের ওপর বর্তায়। পুত্রসন্তান
উপার্জনক্ষম হলে তার ওপর সংসারের
যাবতীয় দায়দায়িত্ব এসে পড়ে। আর
সে যখন স্বামী তখন তাকে স্ত্রীর
ভরণপোষণ দিতে হয়, সে যখন বাবা তখন
তাকে তার ছেলেমেয়েদের
ভরণপোষণ দিতে হয় এবং মেয়েদের
বিয়ের ব্যবস্থা করতে হয়। যখন সে ভাই
তখন ছোট ভাইবোনদের ভরণপোষণ এবং
অবিবাহিত বোনদের বিয়ের ব্যবস্থা
করতে হয়। এ ছাড়া আমাদের দেশে মা-
বাবার ভরণপোষণ নিয়ে আলাদা আইনও
রয়েছে। ইসলাম ধর্মে এসব দায়দায়িত্ব
থেকে নারীকে অব্যাহতি দিয়ে শুধু
তা পুরুষের ওপরই অর্পণ করা হয়েছে।
বিপরীতে কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে
এসব দায়িত্ব পালন ঐচ্ছিক ব্যাপার। সে
এসব দায়িত্ব পালন করতে না পারলে
তাকে বাধ্য করা যাবে না।
উত্তরাধিকারীর ক্ষেত্রে একজন পুরুষ
উত্তরাধিকারসূত্রে মা-বাবার
সম্পত্তি থেকেই অংশ পায়। একজন নারী
সন্তান হিসেবে মা-বাবার কাছ
থেকে, স্বামী মারা গেলে স্ত্রী
হিসেবে স্বামীর কাছ থেকে, মা
হিসেবে সন্তানের কাছ থেকে
সম্পত্তির অংশ পায়। সব অংশ যোগ করলে
এবং উল্লিখিত সব দিক বিবেচনা
করলে নারীর অংশের সম্পত্তি, মা-
বাবার কাছ থেকে পাওয়া পুরুষের
অংশের সম্পত্তির চেয়ে বেশিই হয়।"

ভাড়াটিয়াদের জন্য আইন

ভাড়াটিয়াদের যে আইন জানা
দরকার
প্রায় শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ
ভাড়া বাসায় থাকে। কিন্তু
বেশিরভাগ ভাড়াটিয়াই বাড়ি
ভাড়া সংক্রান্ত আইন জানে না বলে
তারা নিজেদের অধিকার থেকে
বঞ্চিত ও বাড়িওয়ালা কর্তৃক প্রতারিত
হয়ে থাকেন। অন্যদিকে ঝামেলা
এড়াতে অনেক ক্ষেত্রেই
বাড়িওয়ালারা চুক্তি করেন না
ভাড়াটিয়ার সাথে। ভাড়াটিয়ারা
নিজেদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায়
জেনে নিন বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ
আইন ১৯৯১-এর কিছু দরকারি অংশ–
অগ্রিম ভাড়া
বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১-এর ১০
ও ২৩ ধারা মোতাবেক বাড়ি ভাড়া
নিয়ন্ত্রকের লিখিত আদেশ ছাড়া অন্য
কোনোভাবেই বাড়ির মালিক তার
ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ
এক মাসের বাড়ি ভাড়ার অধিক
কোনো প্রকার ভাড়া, জামানত,
প্রিমিয়াম বা সেলামি গ্রহণ করতে
পারবেন না। গ্রহণ করলে দণ্ডবিধি ২৩
ধারা মোতাবেক তিনি দণ্ডিত হবেন।
ভাড়ার রসিদ
বাড়িওয়ালার কাছ থেকে আপনার
পরিশোধকৃত বাড়ি ভাড়ার রসিদটি
বুঝে নিন। সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিক
বা তার প্রতিনিধি আইন অনুযায়ী এ
রশিদ দিতে বাধ্য।
ভাড়া বাড়ানো
বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৬
ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ‘মানসম্মত’
বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ হওয়ার তারিখ
হতে দুই বছর পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। দুই
বছর পর ভাড়ার পরিবর্তন করা যাবে। এই
আইনের ৮ ধারা এবং ৯ ধারায় বর্ণিত
আছে, মানসম্মত ভাড়া অপেক্ষা প্রত্যক্ষ
বা পরোক্ষভাবে অধিক বাড়ি ভাড়া
আদায় করলে সে ক্ষেত্রে প্রথমবারের
অপরাধের জন্য মানসম্মত ভাড়ার
অতিরিক্ত যে অর্থ আদায় করা হয়েছে
তার দ্বিগুণ অর্থদণ্ডে বাড়ি মালিক
দণ্ডিত হবেন এবং পরবর্তী প্রত্যেক
অপরাধের জন্য এক মাসের অতিরিক্ত
যে ভাড়া গ্রহণ করা হয়েছে তার
তিনগুণ পর্যন্ত অর্থদণ্ডে বাড়ির মালিক
দণ্ডিত হবেন।
মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণ
মানসম্মত ভাড়া সম্পর্কে আইনের ১৫ (১)
ধারায় বলা হয়েছে, ভাড়ার বার্ষিক
পরিমাণ সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাজার
মূল্যের শতকরা ১৫ ভাগের বেশি হবে
না। বাড়ির বাজার মূল্য নির্ধারণ করার
পদ্ধতিও বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ
বিধিমালা, ১৯৬৪ তে স্পষ্ট করা আছে।
এটাকে সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য করতে
ঢাকা সিটি করপোরেশান ঢাকা
মহানগরীকে দশটি রাজস্ব অঞ্চলে ভাগ
করে ক্যাটেগরিভিত্তিক সম্ভাব্য
বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে।
উপযোগী বাসস্থান
বাড়ি মালিক তার বাড়িটি
বসবাসের উপযোগী করে রাখতে আইনত
বাধ্য। বাড়ির মালিক ইচ্ছা করলেই
ভাড়াটিয়াকে বসবাসের অনুপযোগী
বা অযোগ্য অবস্থায় রাখতে পারেন
না। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বসবাসের
উপযোগী করে বাড়িটি প্রস্তুত রাখতে
বাড়ির মালিকের উপর আইনের ২১
ধারায় বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে।
অর্থাৎ ভাড়াটিয়াকে পানি সরবরাহ,
বিদ্যুৎ সরবরাহ, পয়ঃপ্রণালী নিষ্কাশন
ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করতে হবে।
এমনকি প্রয়োজনবোধে লিফটের
সুবিধাও দিতে হবে। কিন্তু উক্তরূপ
সুবিধা প্রদানে বাড়ি মালিক অনীহা
প্রকাশ করলে কিংবা বাড়িটি
মেরামতের প্রয়োজন হলেও
ভাড়াটিয়া নিয়ন্ত্রকের কাছে
দরখাস্ত করতে পারবেন।
ভাড়া বাসা থেকে উচ্ছেদ
বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৮নং
ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, ১৮৮২ সনের
সম্পত্তি হস্তান্তর আইন বা ১৮৭২ সালের
চুক্তি আইনের বিধানে যাই থাকুক না
কেন, ভাড়াটিয়া যদি নিয়মিতভাবে
ভাড়া পরিশোধ করতে থাকেন এবং
বাড়ি ভাড়ার শর্তসমূহ মেনে চলেন
তাহলে যতদিন ভাড়াটিয়া এভাবে
করতে থাকবেন ততদিন পর্যন্ত উক্ত
ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে না।
এমনকি ১৮(২) ধারা মতে বাড়ির
মালিক পরিবর্তিত হলেও ভাড়াটিয়া
যদি আইনসম্মত ভাড়া প্রদানে রাজি
থাকেন তবে তাকে বাড়ি থেকে
উচ্ছেদ করা যাবে না।
ভাড়া বাবদ ভাড়াটিয়ার আসবাবপত্র
ক্রয়
আইনের ১২ নং ধারায় বলা হয়েছে,
কোনো বাড়ির মালিক তার বাড়ি
ভাড়া বাবদ ভাড়াটিয়ার আসবাবপত্র
ক্রয় বা আটক করতে পারবে না। তদুপরি
ভাড়া নবায়ন কিংবা মেয়াদ বৃদ্ধির
শর্ত যদি বাড়ি ভাড়া চুক্তিতে
থেকেও থাকে তা সত্ত্বেও
ভাড়াটিয়া বাড়ি ভাড়া নবায়ন না
করে, তাহলেও বাড়িওয়ালা
ভাড়াটিয়ার আসবাবপত্র আটক বা ক্রয়
করতে পারবে না।

নোটারি কী ও কেন ? যদি নোটারী পাবলিক করার জন্য অন্য লোক কে ধরা হয় ,তবে সেটা আসল বা নকল বোঝব কি ভাবে । এবং সেটার নকল কপি তুলব কিভাবে এবং নোটারী কে হতে পারেন ?

প্রশ্নঃ নোটারি কী ও কেন ? যদি নোটারী পাবলিক করার জন্য অন্য লোক কে ধরা হয় ,তবে সেটা আসল বা নকল বোঝব কি ভাবে । এবং সেটার নকল কপি তুলব কিভাবে এবং নোটারী কে হতে পারেন ?
উওরঃ
নোটারি কী ও কেন : বিভিন্ন দলিল বা ডকুমেন্ট সরকারিভাবে সত্যায়িত করাকেই নোটারি বা নোটারি পাবলিক বলা হয়। নোটারি পাবলিককে সংক্ষেপে
নোটারি বলা হয়ে থাকে। নোটারি শব্দের মূল নামপদ ‘note’ এবং ‘ary’ অনুসর্গ নিয়ে গঠিত। শব্দটি এসেছে লাতিন ভাষার nota+arius থেকে, এর অর্থ শর্টহ্যান্ড লেখক, কেরানি ইত্যাদি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নোটারির প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশের আইন অঙ্গনেও নোটারি পাবলিক এক অতি পরিচিত নাম। কোনো গুরুত্বপূর্ণ দলিল বা ডকুমেন্টকে সত্যায়িত করতে গেলেই নোটারি পাবলিকের প্রয়োজন পড়ে। আমাদের দেশে সাধারণত নোটারি পাবলিকের কাজ অনুমোদিত আইনজীবীরাই করে থাকেন। এ বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হয় নোটারিস অর্ডিন্যান্স এবং নোটারিস রুলস-১৯৬৪ দ্বারা। নোটারি কেন করা হয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে ডকুমেন্ট উপস্থাপন করতে হলে সাধারণত নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সত্যায়িত করে জমা দিতে হয়। বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই সত্যায়িত করা বাধ্যতামূলক। জমিজমা সংক্রান্ত দলিল-দস্তাবেজ, হলফনামা,
বিবাহবিচ্ছেদ, গাড়ি বেচাকেনা, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, চারিত্রিক সনদপত্র, জন্ম-মৃত্যুর সনদপত্র এবং বিদেশে নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে নোটারি পাবলিক দিয়ে সত্যায়িত করা বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া পেমেন্ট অথবা ডিমান্ডের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা জোরদার করতে,
বটম্রি এবং রেসপনডেনটিয়া বন্ড (bottomry and respondantia bonds ), চার্টার পার্টি এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক দলিলপত্র তৈরিতে নোটারির ব্যবহার রয়েছে। কীভাবে করতে হয় নোটারি পাবলিক করতে গেলে আইনজীবী আপনার মূল কাগজপত্র যাচাই করে দেখবেন। এরপর তিনি নিশ্চিত হলে তা সত্যায়িত করবেন। মূল কাগজপত্র বলতে বোঝানো হচ্ছে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জন্ম ও মৃত্যুর সনদ,
চারিত্রিক সনদ ইত্যাদি। আর আপনি যদি বিয়ে, তালাক কিংবা হলফনামা তৈরি করতে চান তাহলে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে আপনার নোটারি করতে হবে। নোটারি বিধিমালা (৬০ক) অনুযায়ী, একজন নোটারিয়ান বা যিনি নোটারি করে দেন তাঁর নির্দিষ্ট কার্যালয় থাকতে হবে। আর
নোটারি করার সাইনবোর্ড কার্যালয় ছাড়া অন্য কোথাও ঝোলানো যাবে না। নোটারি করতে খরচ নোটারি পাবলিক করতে কত খরচ হয়? অনেকে মনে করেন, নোটারি পাবলিকের জন্য হাজার খানেক টাকা লাগে। এটি ভুল। এমন ভুল ধারণা ছড়ানোর অবশ্য কারণও রয়েছে। এক
শ্রেণীর দালাল নোটারি পাবলিকের ব্যবসা খুলে সাধারণের কাছ থেকে হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। কিন্তু এ কাজের জন্য সরকারের নির্ধারিত ফি
রয়েছে। সরকার নির্ধারিত ফি সত্যায়নের কাজে ১০ টাকা, আর যেকোনো স্ট্যাম্পে হলফনামা, চুক্তিপত্রের ক্ষেত্রে ২০-২৫ টাকা খরচ হয়। অথচ অনেক নোটারি পাবলিক প্রার্থীদের কাছ থেকে ৫০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে থাকেন। প্রতারণা থেকে সাবধান নিয়মানুযায়ী কাগজপত্র নোটারি করার সময় আপনার নিজের আইনজীবীর সামনে উপস্থিত থাকতে হবে। অনেক সময় প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে নোটারির কাজ সম্পাদন ও ভুয়া কাগজপত্রের ভিত্তিতে নোটারি করা হয়। নোটারির কাজ হয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। অনেক অবৈধ নোটারি পাবলিক
নিজেরাই সিলমোহর বানিয়ে প্রতারিত করে থাকেন। কাজেই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া মারা গেছেন এমন নোটারি পাবলিকের সিলমোহর ব্যবহার করেও অনেকে প্রতারিত করতে পারেন। বয়সের মিথ্যা তথ্য দেওয়া সনদ, বিবাহবিচ্ছেদ ও মামলার কাজে মিথ্যা হলফনামা, পেছনের তারিখে দলিল তৈরি, মৃত ব্যক্তিকে জীবিত বানিয়ে আমমোক্তারনামা বানানো, মিথ্যা চুক্তিপত্র, ভুয়া আপসনামাসহ বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা সনদ এবং দলিল সম্পাদনার কাজ করছেন এক শ্রেণীর অবৈধ নোটারি পাবলিক। ভুয়া নোটারিরা অনেক ক্ষেত্রে সাদা কাগজে নোটারির কাজ সম্পন্ন করে অপরাধী চক্রকে বিভিন্নভাবে অপরাধ করতে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অতএব নোটারি করার আগে নোটারি পাবলিক সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন। কারা নোটারি করতে পারবেন নোটারিস অর্ডিন্যান্স এবং নোটারিস রুলস-১৯৬৪ দ্বারা
বাংলাদেশে নোটারি পাবলিকের বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হয়। সাধারণত কোনো ব্যক্তি, যিনি কমপক্ষে সাত বছর আইনজীবী হিসেবে কর্মরত আছেন অথবা বিচার বিভাগের সদস্য হিসেবে কমপক্ষে পাঁচ বছর কর্মরত ছিলেন অথবা সরকারের আইনি খসড়া এবং সরকারের আইন প্রণয়নকাজে নিয়োজিত ব্যক্তি নোটারি পাবলিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য।
যদি নোটারী পাবলিক করার জন্য অন্য লোক কে ধরা হয় ,তবে সেটা আসল বা নকল বোঝব কি ভাবে ।
এবং সেটার নকল কপি কিভাবে তুলব ?
উওরঃ নোটারির সব document private এবং primary documents যেটা affidavits verified নোটারি seal এবং নোটারি lawyer er verification ছাড়া এটি meanless । তাই verification অবশ্যই যাবে verified ও যে ব্যক্তি ইয়া করেছে তাকে যাছাই বাছাই করলে বোঝা যাবে । তবে প্রুফ proof এর বেলায় ব্যবহার বিভিন্ন হতে পারে ।

যিনি নোটারী হতে পারেনঃ (বাংলাদেশ নোটারী অধ্যাদেশ, ১৯৬১ অনুসারে আদালতে কমপক্ষে ৭ বছর ধরে আইনচর্চা রত যে কোন আইনজীবী বিচার বিভাগে কমপক্ষে ৫ বছর ব্যাপী কর্মরত কোন সদস্য আইন বিভাগ বা আইন প্রণয়নে কর্মরত কোন সরকারী চাকুরে নোটারী পাবলিকগণ সরকারী পারিতোষিক প্রাপ্ত হন এবং রাষ্ট্রীয় আদেশ মেনে চলেন। নোটারী নিজ ক্ষমতা বলে সত্যায়িত কাগজে নোটারীকৃত সীল বা ষ্ট্যাম্প যুক্ত করে
থাকেন।নোটারি পাবলিক কোন বিনিময়ে দাবিকৃত অর্থের প্রতিবাদ জানানো এবং প্রাতিষ্ঠানিক চরিত্রের অন্যান্য বিষয় ও আইনি দায়িত্ব পালনের জন্য চুক্তিপত্র, কবুলিয়তনামা ইত্যাদির খসড়া প্রণয়ন অথবা সনদ প্রদান করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন সরকারি কর্মকর্তা অথবা সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি। দেশের নিজস্ব আইন অনুযায়ী নির্বাহী বিভাগ অথবা অন্য কোন নিয়োগ-কর্তৃপক্ষ নোটারি পাবলিক নিযুক্তি প্রদান করেন।