বুধবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৫

তালাক কি ? কি কি উপায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ হতে পারে ? স্বামী কি যখন খুশি তখন তালাক দিতে পারে ? এই ৯০ দিন অতিক্রান্ত হবার আগে কি তালাক প্রত্যাহার করা যাবে ? বিচ্ছেদ প্রাপ্ত স্বামী কি আবার আগের স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারে? স্ত্রী কীভাবে স্বামীকে তালাক দিতে পারে? তালাক-ই-তৌফিজ , খুলা , মোবারাত কি ? স্ত্রী কর্তৃক আদালতে আবেদন মাধ্যমে তালাক ? তালাক কখন কার্যকরী হয় না? স্ত্রী স্বামীকে কোট বা সালিসের মাধ্যমে তালাক দেয়ার অধিকার রাখে কি না? শরীয়তে এ ব্যাপারে হুকুম কি? পবিএ কোরআনে তালাক এর বিধান কি ?

তালাক কি ? কি কি উপায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ হতে পারে ? স্বামী কি যখন খুশি তখন তালাক দিতে পারে ? এই ৯০ দিন অতিক্রান্ত হবার আগে কি তালাক প্রত্যাহার করা যাবে ? বিচ্ছেদ প্রাপ্ত স্বামী কি আবার আগের স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারে? স্ত্রী কীভাবে স্বামীকে তালাক দিতে পারে? তালাক-ই-তৌফিজ , খুলা , মোবারাত কি ? স্ত্রী কর্তৃক আদালতে আবেদন মাধ্যমে তালাক ? তালাক কখন কার্যকরী হয় না? স্ত্রী স্বামীকে কোট বা সালিসের মাধ্যমে তালাক দেয়ার অধিকার রাখে কি না? শরীয়তে এ ব্যাপারে হুকুম কি? পবিএ কোরআনে তালাক এর বিধান কি ?
০ তালাক কি ?
তালাক
আরবি-তে 'তালাক' শব্দের অর্থ হল ত্যাগ করা , ছিন্ন করা , ছিন্ন করা। বিবাহ-চুক্তির মাধ্যমে স্থাপিত সম্পর্ক আইনসিদ্ধ উপায়ে ভেঙ্গে দেওয়াকে মুসলিম আইনে 'তালাক' বা বিবাহবিচ্ছেদ বলে। মুসলিম আইনে বিবাহবিচ্ছেদ নর-নারীর একটি বৈধ ও স্বীকৃত অধিকার। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক যদি এমন পর্যায় পৌঁছয় যে, একসঙ্গে থাকা তাঁদের একজন বা দুজনের পক্ষেই সম্ভব হয় না, সেক্ষেত্রে কয়েকটি নির্দিষ্ট উপায়ে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটানো যেতে পারে।
০ কি কি উপায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ হতে পারে?
(ক) স্বামীর পক্ষ থেকে তালাক;
(খ) স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাক, যদি স্বামী স্ত্রীকে তালাক-ই-তৌফিজের ক্ষমতা দান করে থাকেন;
(গ) খুলার মাধ্যমে;
(ঘ) মুবারাতের মাধ্যমে;
(ঙ) আদালতের মাধ্যমে;
০ স্বামী কি যখন খুশি তখন তালাক দিতে পারে?
মুখে পরপর তিনবার 'তালাক' উচ্চারণ করলে অথবা একসাথে 'বায়েন তালাক' কথাটি বললেই তালাক কার্যকরী হয় না। যদিও এই ভুল ধারণাটা এখনও অনেকের মধ্যে আছে এবং আমাদের দেশে স্বামীরা অহরহই মুখে মুখে তালাক দিয়ে থাকেন।
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭ (১) ধারা অনুযায়ী, স্বামী তালাক দেবার পরপরই তালাক দেবার সংবাদটি একটি নোটিশের মাধ্যমে চেয়ারম্যানকে (যে চেয়ারম্যানের এলাকায় স্ত্রী বাস করছেন) জানাতে হবে।সেই নোটিশের একটি কপি স্ত্রীকে পাঠাতে স্বামী বাধ্য। স্বামী যদি চেয়ারম্যান এবং স্ত্রীকে তালাকের নোটিশ না পাঠান, তবে ঐ একই আইনের ৭ (২) ধারা অনুযায়ে স্বামী এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা দশ হাজার টাকা জরিমানা অথবা অথবা দুটি দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন। নোটিশ পাবার ত্রিশ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পুনর্মিলন ঘটানোর উদ্দেশ্যে উভয়পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সালিশী পরিষদ গঠন করবেন এবং তাঁদের মধ্যে সমঝোতা আনার প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেবেন।
কিন্তু সালিশীতে যদি কাজ না হয় এবং নোটিশ দেবার ৯০ দিনের মধ্যে স্বামী যদি স্ত্রীকে দেওয়া নোটিশ প্রত্যাহার না করেন, তবে ৯০ দিন পরে তালাক কার্যকরী হবে। ৯০ দিন পার না হওয়া পর্যন্ত দম্পতিকে আইনসিদ্ধ স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই ধরা হবে এবং স্ত্রী ভরণপোষণও পাবে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ -এর ৭(১) নং ধারা অনুযায়ী - চেয়ারম্যান ও স্ত্রীকে নোটিশ না পাঠালে স্বামী শাস্তি পাবেন ঠিকই, কিন্তু তালাক বাতিল হবে না। তালাক কার্যকরী হবে। (সম্প্রতি একটি মামলায় (মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বনাম মোছা:হেলেনা বেগম ও অন্যান্য। সিভিল রিভিশন নং ৬৯৮, ১৯৯২) এ মর্মেই রায় দেওয়া হয়েছে।
০ এই ৯০ দিন অতিক্রান্ত হবার আগে কি তালাক প্রত্যাহার করা যাবে ?
হ্যাঁ, এই ৯০ দিন অতিক্রান্ত হবার আগে অবশ্যই তালাক প্রত্যাহার করা যাবে। এই সময়টা এইজন্যই রাখা হয়েছে যাতে করে স্বামী-স্ত্রী উভয়পক্ষই ঠাণ্ডা মাথায় সব কিছু ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন - পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে পারেন।
০ বিচ্ছেদ প্রাপ্ত স্বামী কি আবার আগের স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারে?
১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইন ৭ (৬) ধারা অনুযায়ী তালাকের মাধ্যমে কোন বিবাহবিচ্ছেদ ঘটলে, তালাক হওয়া দম্পতি আবার বিয়ে করতে চাইলে নতুন করে বিয়ে করতে হবে। তবে তার জন্য মধ্যবর্তী বা হিল্লা বিয়ের কোনো প্রয়োজন নেই।
(হিল্লা বিয়ে হল তালাক দেওয়া নারীকে প্রাক্তন স্বামী বিয়ে করতে চাইলে সেই নারীকে অন্তর্বর্তী কালে অন্য কোনো পুরুষকে বিয়ে করার পুরনো প্রথা। সেই প্রথা অনুযায়ী হিল্লা বিয়ের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়ে যাবার পর তাঁকে প্রাক্তন স্বামী আবার নিকাহ্ করতে পারবেন । ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের মাধ্যমে 'হিল্লা' নিকাহ্ বলে যে বিয়ে প্রচলিত ছিল, সেটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হিল্লা বিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনী কাজ। কেউ এ ধরণের বিয়ে ঘটানোর উদ্যোগ নিলে সরাসরি আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় খবর দেওয়া উচিত।)
স্ত্রী কীভাবে স্বামীকে তালাক দিতে পারে?
(১) তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে
(২) খুলার মাধ্যমে
(৩) মোবারাতের মাধ্যমে
(৪) আদালতে আবেদনের মাধ্যমে
(১) তালাক-ই-তৌফিজ কি?
তালাক-ই-তৌফিজ স্ত্রীর নিজস্ব ক্ষমতা নয়। স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেয়, তবে স্ত্রীও স্বামীর মতো তালাক দিতে পারে। সেক্ষেত্রে স্ত্রীকেও স্বামীর মতো তালাকের নোটিশ চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাতে এবং এক কপি স্বামীর কাছে পাঠাতে হবে। স্ত্রীর এই তালাক দেওয়ার ক্ষমতাকে তালাক-ই-তৌফিজ বলে।
নিকাহ্নামার ১৮ নং ঘরে "স্বামী স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করছে কি না? করে থাকলে কী শর্তে?" এই প্রশ্নটি থাকে। স্বামীর একতরফা ক্ষমতার কারণে স্ত্রীকে বহু নির্যাতন সহ্য করেও স্বামীর সাথে থাকতে হয়। ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইনে বর্ণিত শর্তগুলো (যেমন, নির্যাতন, নিরুদ্দেশ) না থাকলে এবং হুলার মাধ্যমে স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ না পেলে একটি মেয়ের পক্ষে বিয়ে থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব। সেক্ষেত্রে স্ত্রী অপেক্ষাকৃত কম জটিলতায় তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে মুক্তি পেতে পারে। তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম। নিকাহ্নামার ১৮ নং ঘরটি এজন্য অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পূরণ করা উচিত। অনেক সময় কাজীরা এ প্রশ্ন করেন না এবং ঘরটি শূন্য থাকে। কাজীদের অবশ্যই দুপক্ষকে দিয়ে ঘরটি সম্পর্কে অবগত করানো উচিত।
(২) খুলা বিচ্ছেদ কাকে বলে?
যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক বনিবনা ভাল না থাকে, তবে স্ত্রী অর্থ বা সম্পত্তির বিনিময়ে স্বামীকে বিচ্ছেদ ঘটাতে রাজী করাতে পারে। যেহেতু অধিকাংশ নারীর সম্পত্তি থাকে না অথবা সম্পত্তি থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা থাকে না, সেক্ষেত্রে স্ত্রী মোহরানা বা মোহরানার অংশ দিয়ে স্বামীকে তালাক দিতে রাজী করানোর চেষ্টা করতে পারেন।
(৩) মোবারাত কি ?
যে ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী, উভয়ই একে অন্যের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন এবং তাঁরা চুক্তির মাধ্যমে তাঁদের বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটান, তখন বলা মোবারাত। খুলার মত মোবারাতও এক ধরণের চুক্তি-ভিত্তিক বিবাহবিচ্ছেদ।
(৪) স্ত্রী কর্তৃক আদালতে আবেদন মাধ্যমে তালাক ?
১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইনের অধীনে স্ত্রী নিম্নোক্ত ৯টি কারণের যে কোনো এক বা একাধিকের ভিত্তিতে আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদ প্রার্থনা করতে পারেন:
(১) স্বামী ৪ বছরের অধিক সময় নিরুদ্দেশ থাকলে;
(২) দুই বছর যাবত্ স্ত্রীর খোরপোষ দিতে স্বামী ব্যর্থ হলে;
(৩) স্বামী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান লঙঘন করে অতিরিক্ত স্ত্রী গ্রহণ করলে;
(৪) স্বামী সাত বছর বা তার বেশি সময় কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে;
(৫) কোনো যুক্তি-সঙ্গত কারণ ছাড়া তিন বছর ধরে স্বামী তাঁর দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে;
(৬) স্বামী বিয়ের সময় পুরুষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা দায়ের করার সময়পর্যন্ত বজায় থাকলে;
(৭) স্বামী দুই বছর ধরে পাগল থাকলে অথবা মারাত্বক যৌনব্যধিতে আক্রান্ত থাকলে;
(৮) নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে হয়ে থাকলে অথবা সাবালকত্ব লাভের পর অর্থাত্ ১৮ বছর পূর্ণ হবার পর স্ত্রীর বিয়ে অস্বীকার করলে (কিন্তু এক্ষেত্রে স্বামীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে থাকলে এরকম মামলা দায়ের করা যাবে না)
(৯) নিম্নলিখিত যে কোনো অর্থে স্ত্রীর সাথে স্বামী নিষ্ঠুর আচরণ করলে:
(ক) যদি স্ত্রীকে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা;
(খ) কুখ্যাত মহিলাদের (women of ill reputation) সঙ্গে স্বামীর মেলামেশা করা কিংবা নৈতিকতা-বর্জিত জীবন যাপন করা।
(গ) নৈতিকতা-বর্জিত জীবন যাপনের জন্য স্ত্রীকে বাধ্য করা;
(ঘ) স্ত্রীর সম্পত্তি হস্তান্তর করা, কিংবা স্ত্রীকে তার সম্পত্তির বৈধ অধিকার প্রয়োগে দেওয়া;
(ঙ) স্ত্রীকে তার ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনে বাধা দেওয়া;
(চ ) যদি স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকে, তবে পবিত্র কোরানের নির্দেশে তাদের সাথে সমান ব্যবহার না করা;
তবে উপরোক্ত কারণগুলির ভিত্তিতে মামলা দায়ের করতে হলে স্ত্রীর কাছে সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকতে হবে।
০ তালাক কখন কার্যকরী হয় না?
গর্ভবতী অবস্থায় তালাক দিলে সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকরী হবে না। সন্তানের বৈধতা বা পিতৃত্ব নির্ধারণের জন্যই এ আইন তৈরি করা হয়েছে।
বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তান কার কাছে থাকবে?
বিবাহবিচ্ছেদের পর ছেলে সন্তান ৭ বছর পর্যন্ত ও মেয়ে সন্তান বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে। বাবা ভরণপোষণ দেবে। যদি বাবা দায়িত্ব পালন না করে, সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান সালিশী পরিষদের মাধ্যমে আলাপ আলোচনা করে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে পারেন।
০ স্ত্রী স্বামীকে কোট বা সালিসের মাধ্যমে তালাক দেয়ার অধিকার রাখে কি না? শরীয়তে এ ব্যাপারে হুকুম ঃ
উত্তর : শরীয়তের তালাক দেয়ার অধিকার একমাত্র স্বামীকে দেওয়া হয়েছে। স্ত্রীর জন্যে স্বামীকে তালাক দেয়ার কোন অনুমতি নাই। তবে স্বামী যদি স্ত্রীকে অধিকার দিয়ে থাকে স্ত্রী স্বামীর দেয়া ইখতিয়ার বা ক্ষমতা অনুয়ায়ী নিজের উপর তালাক গ্রহণ করতে পারবে। শরীয়তের পরিভাষায় একে তালাকে তাফবীজ বলা হয়। স্বামী যদি পুরুষত্বহীন হয় শরয়ী কোন দোষে দোষী প্রমাণীত হয়, যার ফলে স্ত্রী তার সাথে ঘর সংসার করতে অপারগ হয়, তাহলে স্ত্রী মুসলিম বিচারকের নিকট অতবা মুফতী বোর্ডের নিকট মামলা দায়ের করবে। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক অতবা মুফতী বোর্ড উপযুত্ত ব্যবস্তা গ্রহন করে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ করে দিবে। মোট কথা স্বামীর তালাক দেয়া ছাড়া্ও বিবাহ বিচ্চেদের আরো কয়েকটি পন্থা শরীয়ত অনুমোদন করেছে। কিন্তু স্তী স্বামীকে কোন অবস্তায়ই তালাক দিতে পারবে না। যদি দেয় তাহলে তা বেকার বলে গণ্য হবে। ঐ অবস্তায় স্ত্রী যদি অন্য কোথাও বিবাহ বসে তাহলে তদের সারা জীবনের মেলামেশা যিনা হিসাবে গণ্য হবে। (ফাতা্ওয়া দারুল উলুম : ৯/৪২, হেদায়া : ২/৩৭৬) (সংগৃহতি..)
০ পবিএ কোরআনে তালাক এর বিধান ;
সূরা তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ - ৬৫
১২ আয়াত, ২ রুকু, মাদানী
১। হে নবী ৫৫০৩ ! যখন তোমরা স্ত্রীদের তালাক দিতে চাইবে ৫৫০৪, তখন ইদ্দতকালের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দিও ৫৫০৫, এবং [ নির্ভুল ভাবে ] ইদ্দতকাল গণনা করবে এবং তোমার প্রভু আল্লাহকে ভয় করবে ৫৫০৬। তাদেরকে তাদের বাসগৃহ থেকে বের করে দিও না। স্পষ্ট অশ্লীলতার অভিযোগ ব্যতীত তারাও যেনো বের না হয় ৫৫০৭। এগুলিই হচ্ছে আল্লাহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত সীমারেখা এবং যে আল্লাহ্‌র এই সীমারেখা লংঘন করে সে [ নিজের ]আত্মার প্রতি অত্যাচার করে। তুমি জান না, হয়তো আল্লাহ্‌ এর পরে কোন উপায় করে দেবেন ৫৫০৮।
৫৫০৩। লক্ষ্য করুন এই আয়াতে নবীকে প্রথমে ব্যক্তিগতভাবে সম্বোধন করা হয়েছে উম্মতের শিক্ষক ও প্রতিনিধি হিসেবে। এর পরে উম্মতের জন্য নির্দ্দেশ দান করা হয়েছে। অর্থাৎ, " হে নবী ! উম্মতকে বলিয়া দাও " বাক্যটি যার দ্বারা আল্লাহ্‌ সমগ্র মুসলিম সমাজকে সম্বোধন করেছেন।
৫৫০৪। হাদীসে আছে আল্লাহ্‌র বিধান সমূহের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ আল্লাহ্‌র চক্ষে সর্বাপেক্ষা ঘৃণ্য। বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক সম্বন্ধে সাধারণ নির্দ্দেশ দেয়া হয়েছে [ ২ : ২২৮ - ২৩২, ২৩৬ -২৩৭ ; ২৪১ ] আয়াতে এবং [ ৪ : ৩৫ ] আয়াতে। দেখুন এসব আয়াত এবং তাদের টিকা সমূহ।
৫৫০৫। 'ইদ্দত ' মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদের সাথে শব্দটি জড়িত। দেখুন যা ব্যাখ্যা করা হয়েছে [ ২ : ২২৮ ] আয়াতে ও টিকা ২৫৪। সাধারণভাবে এর অর্থ হচেছ এক "নির্দ্দিষ্ট সময়কাল"।
৫৫০৬। 'ইদ্দত ' বা 'নির্দ্দিষ্ট সময়কাল " -কে নির্ধারণ করা হয়েছে, স্ত্রীর বা অজাত সন্তানের [ যদি থাকে] এবং প্রকৃতির যৌন বিধানের স্বার্থরক্ষার জন্য। আর এভাবেই সুশীল সমাজের প্রাথমিক বুনিয়াদ সৃষ্টি করা হয়েছে। অনেক তফসীরকারগণের মতে রজঃস্রাবকালে তালাক দেয়া বৈধ নয়। দেখুন [ ২ : ২২ ] আয়াত, অনুযায়ী বলা চলে যেহেতু সময়টি নারীর এক অপবিত্র অবস্থা এবং পুরুষের জন্য কাম্য নয়। সুতারাং স্বামী স্ত্রীর কোনও মতদ্বৈতকে সে সময়ে উত্থাপন করা উচিত নয়। বিবাহের ভিত্তি-ই হচ্ছে যৌন জীবন। সুতারাং বিবাহ বিচ্ছেদের সময়ে দৃষ্টিদেয়া প্রয়োজন যে এর সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের যেনো অবমাননা না করা হয়। তাড়িত হয়ে যেনো কোনও কাজ করা না হয়। আবেগ তাড়িত অনুভূতি হচ্ছে পশুর অনুভূতি। মানুষ পশু থেকে উন্নত কারণ সে পরিচালিত হয় বিবেক দ্বারা। তালাকের ন্যায় অপছন্দের কাজের সময়ে প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহ্‌র ভয়ে ভীত হয়ে বিবেকের দ্বারা পরিচালিত হয়ে প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
৫৫০৭। বৈবাহিক জীবনে ইসলাম মহিলাদের অধিকারের মূল্যদান করে। স্বামীর সম্পত্তি, বাড়ী প্রতিটি বস্তুতেই তার অধিকার ন্যায়সঙ্গত। বাড়ী অর্থ শুধুমাত্র বাসস্থানই নয়; এর অর্থ সেই বাড়ী পরিচালনার যাবতীয় খরচ, নারীর নিজের ও সন্তানদের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করা পুরুষের কর্তব্য। এই খরচ শুধু যে দাম্পত্য জীবন কালেই পুরুষ বহন করবে তা নয়, 'ইদ্দত' চলা কালেও তাকে বহন করতে হবে। এখানে নারীকে বলা হয়েছে তারাও যেনো এ সময়কালে বাড়ী থেকে চলে না যায়। কারণ 'ইদ্দত' চলা কালেও সমঝোতার সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকে, কিন্তু দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকলে সকল কিছুই ভিন্নরূপ ধারণ করতে পারে।
৫৫০৮। বিবাহ বিচ্ছেদ অপেক্ষা সমঝোতা সকল সময়েই কাম্য এবং উপযুক্ত পরিবেশে তা সম্ভবও হয়। দুপক্ষেরই অভিযোগ একটি পারিবারিক সভাতে উপস্থাপন করতে হবে, যেখানে উভয়দলের পারিবারিক সদস্য উপস্থিত থাকবেন। দেখুন [ ৪ : ৩৫ ] আয়াত। পারস্পরিক দৈহিক আকর্ষণ মন্দার মুখে, বিবাহ বিচ্ছেদের বা তালাকের উচ্চারণ করা উচিত নয় [ টিকা ৩৫০৬ ]। যখন তা উচ্চারণ করা হবে তখন তার জন্য নির্দ্দিষ্ট সময়কাল থাকবে সমঝোতার জন্য। দেনমোহর শোধ করতে হবে, নারীর উপযুক্ত ভরণ পোষণের বন্দোবস্ত থাকবে হবে। সব কিছুই করতে হবে নারীর অধিকার ও সমতার ভিত্তিতে। শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত সমঝোতার চেষ্টা করা প্রয়োজন। আবেগ বা ক্রোধের বশবর্তী হয়ে করা যে কোনও কাজকে বাধা দান করতে হবে, যেনো কেহ ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত না হয়। "হয়তো আল্লাহ্‌ এর পর কোন উপায় করে দেবেন।"
২। এরূপে, যখন তারা তাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করে, তোমরা তাদের হয় ন্যায়সঙ্গত ভাবে ফেরত নেবে, ৫৫০৯, অথবা ন্যায়সঙ্গতভাবে বিচ্ছেদ ঘটাবে। এবং তোমাদের মধ্য থেকে দুজন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী হিসেবে রাখবে। [ যেনো ] আল্লাহ্‌র সম্মুখে উপস্থিত এভাবে তারা সাক্ষ্য দেবে ৫৫১০। যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে ও শেষ বিচার দিবসকে বিশ্বাস করে, এটা হচ্ছে তার জন্য সর্তকবাণী। যারা আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তাদের জন্য নিষ্কৃতি পাওয়ার পথ করে দেবেন। ৫৫১১
৫৫০৯। দেখুন সূরা [ ২ : ২৩১ ] আয়াত। তালাক প্রক্রিয়ার সকল কিছুই যথাযথ সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে এবং উভয়পক্ষের অধিকার ন্যায়ের ভিত্তিতে বিবেচনা করতে হবে।
৫৫১০। 'ইদ্দত' শেষ হওয়ার পূর্বে স্ত্রীকে পুণরায় গ্রহণ করতে পারে। আর যদি ইদ্দত শেষ হয়ে যায়, তবে তাকে সামর্থ্য অনুযায়ী যথাযোগ্য মর্যদার সাথে বিদায় করতে হবে। সকল প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য, দুজন ন্যায়পরায়ণ লোক উভয় পক্ষ থেকে সাক্ষী হিসেবে কাজ করবেন, যেনো সমগ্র ব্যবস্থা স্বার্থপরতা ও অন্যায় দ্বারা সংঘটিত না হয়। প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত যে, সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সংঘটিত হবে ন্যায় ও সত্যের উপরে ভিত্তি করে। কারণ বিবাহ ও তালাক হচ্ছে আমাদের সমাজ জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্বরূপ যা আমাদের পারিবারিক জীবনকে প্রভাবিত করে। সুতারাং বিবাহ এবং তালাক আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনকেও প্রভাবিত করতে সক্ষম।
৫৫১১। বিবাহ বিচ্ছেদের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া এতটাই তিক্ততার সৃষ্টি করে যে, খুব বিবেকবান ব্যক্তির মধ্যস্থতাও সব সময়ে অন্যায় করা থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয় না। এ ক্ষেত্রেই আল্লাহ্‌র হুকুম হচ্ছে, " আল্লাহ্‌কে ভয় কর" এবং আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের আশায় সঠিক সাক্ষ্য বা কার্যটি গ্রহণ করবে। এরূপ ক্ষেত্রে " তিনি তাদের জন্য নিস্কৃতি পাওয়ার পথ করে দেবেন।" অচেনা অজানা স্থান থেকে যা সে ধারণাও করে নাই সেখান থেকে সাহায্যের হাত প্রসারিত হবে। চরম,শত্রুতা বন্ধুত্বে রূপান্তরিত হতে পারে। হয়তো বা শিশুর কান্না বা হাসি তিক্ত সম্পর্ককে পুণঃ প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, তিক্ততায় পরিপূর্ণ দুটি হৃদয় তাদের তিক্ততাকে দূর করতে পারে ইত্যাদি। আল্লাহ্‌র ই‌চছায় সাধারণ ঘটনার মাধ্যমে অসাধারণ কিছু ঘটে যেতে পারে। আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতা আত্মাকে পরিবেশের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়ে শান্তির আলয়ে পৌঁছে দিতে সক্ষম।
৩। তিনি তাকে ধারণাতীত [ উৎস ] থেকে জীবনোপকরণ দান করবেন। এবং কেউ যদি আল্লাহ্‌র উপরে বিশ্বাস স্থাপন করে, তার জন্য আল্লাহ্‌-ই যথেষ্ট। আল্লাহ্‌ অবশ্যই স্বীয় ইচ্ছা পূর্ণ করবেন ৫৫১২। অবশ্যই, সব কিছুর জন্য আল্লাহ্‌ স্থির করেছেন নির্দ্দিষ্ট মাত্রা।
৫৫১২। পৃথিবীর কর্মক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিবেশে আমরা মানসিক ভাবে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ি। ক্রোধ, বিরক্তি, হতাশা আমাদের অধৈর্য্য করে তোলে। মনে হয় সমগ্র পৃথিবী আমাদের জন্য বৈরী। বন্ধু, আত্মীয়, পরিচিত পরিবেশ সব কিছু তখন অসহনীয় ও হৃদয়হীন। এরূপ ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌ তাঁর উপরেই একমাত্র ভরসা করতে বলেছেন। মানুষ তো নিজের সম্বন্ধে অন্ধসম, সেতো তার নিজের দুর্বলতা এবং অক্ষমতা পরিমাপে অক্ষম। কিন্তু বিশ্ব বিধাতা সব জানেন, তিনি সর্বজ্ঞ। তাঁর বিশ্বব্যপী কল্যাণকর পরিকল্পনার আমরা এক ক্ষুদ্র অংশ। এবং সেই পরিকল্পনা কার্যকর হবেই। তাঁর নিয়ম নীতি সব কিছু ন্যায় এবং নির্দ্দিষ্ট মাত্রাতে বর্তমান। সেখানে কোনও অনিয়ম কেহ লক্ষ্য করতে পারবে না।
৪। তোমাদের যে সব স্ত্রীদের ঋতুমতী হওয়ার বয়েস অতিক্রম করে গেছে, এবং যাদের ঋতু এখনও হয় নাই, যদি তাদের ইদ্দতকাল সম্বন্ধে কোন সন্দেহ থাকে, তবে তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস ৫৫১৩। আর গর্ভবতী নারীদের জন্য ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ্‌ তার সমস্যার সমাধান সহজ করে দেবেন। ৫৫১৪
৫৫১৩। দেখুন সূরা [ ২ : ২২৮ ] আয়াত। তালাকের পূর্বে স্ত্রীর 'ইদ্দত' বা বিচ্ছিন্ন থাকার মেয়াদ কাল বর্ণনা করা হয়েছিলো তিন রজঃস্রাব কাল। কিন্তু যে সব স্ত্রীলোকের ঋতুমতী হওয়ার আশা নাই বা সন্দেহ থাকে তাদের জন্য ক্যালেন্ডারের তিনমাস ধার্য করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে পরিষ্কার ভাবে বোঝা যাবে যে উক্ত নারীগণ অন্তঃস্বত্তা কি না। যদি তারা অন্তঃস্বত্তা হয় সে ক্ষেত্রে ইদ্দতকাল হবে বাচ্চা প্রসব না করা পর্যন্ত।
৫৫১৪। দেখুন উপরের টিকা নং ৫৫১১। এখানে আল্লাহ্‌ ঘোষণা করেছেন যে, যদি কেউ প্রকৃতই অন্তর থেকে আল্লাহকে ভয় করে এবং আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের আশায় ন্যায়ের জন্য কাজ করে এবং এ কারণে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে দ্বিধা বোধ করে না, সেরূপ ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র সাহায্য অবশ্যাম্ভবী। তার জীবনের সকল বাধা বিপত্তি দূর হয়ে যাবে। তার সকল বাধা-বিপত্তি সত্য ও সুন্দরের স্পর্শে বৃহত্তর ও কল্যাণকর রূপে পরিসমাপ্তি লাভ করবে। আমাদের প্রিয় নবীর জীবনের মাধ্যমেও আমরা এই সত্যকে প্রতিভাত দেখি বারে বারে।
৫। এই হলো আল্লাহ্‌র বিধান যা তিনি তোমাদের প্রতি প্রেরণ করেছেন। যদি কেউ আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার থেকে দুর্ভাগ্য দূর করে দেবেন ৫৫১৫; এবং পুরষ্কার বৃদ্ধি করে দেবেন।
৫৫১৫। বিশ্ব জুড়ে আল্লাহ্‌র যে আইন তা কোনও অসংলগ্ন বা অযৌক্তিক কিছু নয়।আল্লাহ্‌র আইন তাঁর প্রত্যাদেশ কোরাণের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। এই বিধান সমূহ মানুষের জাগতিক ও পারলৌকিক কল্যাণের জন্য নিবেদিত। যদি আমরা একান্তভাবে আল্লাহ্‌র হুকুম সমূহ মেনে চলতে পারি। আল্লাহ্‌র জ্ঞান ও প্রজ্ঞার নিকট আত্মসর্মপন করতে পারি, তবে অচিরেই আমাদের সকল বাধা বিপত্তির অপসারণ ঘটবে। শুধু তাই-ই নয় আমাদের ব্যক্ত বা অব্যক্ত সকল মানসিক যন্ত্রণা দূরীভূত হয়ে যাবে। সুদক্ষ রাখাল যেরূপ তার মেষপালকে উর্বর শষ্যশ্যামল তৃণভূমির সন্ধান দানে এবং তথায় পরিচালিত করতে সক্ষম - আল্লাহ্‌ সেরূপ আমাদের মত অজ্ঞদের কল্যাণের পথে, মংগলের পথে পরিচালিত করতে সক্ষম। আল্লাহ্‌র পথে যত আমরা অগ্রসর হব, তত আমাদের চরিত্রে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, ন্যায়নীতির প্রকাশ ঘটবে, ফলে আত্মার মাঝে জন্ম নেবে অন্তর্দৃষ্টি, বিবেক ও দূরদর্শিতা। আল্লাহ্‌র এই পুরষ্কার চর্মচক্ষে দৃশ্যমান নয় কিন্তু যে তা লাভ করে সে অনুভব করে এর মূল্যমান। এ আত্মার এক অমূল্য সম্পদ।
৬। তোমরা তোমাদের সামর্থ অনুযায়ী যেরূপ জীবন যাপন কর, তাদেরও [ ইদ্দত কালে ] সেইরূপ জীবন ধারণের মান দিবে। সংকটে ফেলার জন্য তাদের উত্ত্যক্ত করবে না ৫৫১৬। যদি তারা গর্ভবতী হয়ে থাকে, তাহলে ৫৫১৭, সন্তান প্রসব পর্যন্ত তাদের জন্য ব্যয় করবে। এবং যদি তারা তোমাদের [ সন্তানদের ] স্তন্য পান করায়, তবে তাদের পারিশ্রমিক দেবে। [ সন্তানের কল্যাণ সম্পর্কে] তোমরা নিজেদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত ভাবে পরস্পর পরামর্শ করবে। আর যদি তোমরা তা কষ্টকর মনে কর ৫৫১৮ তবে অন্য স্ত্রীলোক [ শিশুকে ] তার [ পিতার ] পক্ষে স্তন্য দান করবে ৫৫১৯।
৫৫১৬। দেখুন টিকা ৫৫০৭। মানুষ জন্মগত ভাবে স্বার্থপর। একজন স্বার্থপর লোক সাধারণভাবে মনে করতে পারে যে, প্রকৃত তালাকের পূর্বে, ইদ্দত পালন করার সময়ে, স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য সঠিক ভাবে পালনের প্রয়োজন নাই। সুতারাং সে ঔদ্ধত্য অহংকারে অসহায় নারীর প্রতি দুর্ব্যবহার করতে পারে এবং তার প্রাপ্য আহার ও বাসস্থানের সুবন্দোবস্ত নাও করতে পারে। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ ঘোষণা করেছেন যে, পুরুষ তার নিজ জীবনযাত্রার মান অনুযায়ী ইদ্দত পালনকারী নারীর ভরণপোষণ করবে, এমন তো হতে পারে যে, আল্লাহ্‌ হয়তো তাদের পূণর্মিলন ঘটিয়ে দেবেন। আর যদিও বা তাদের পূণর্মিলন নাও ঘটে, তবুও বিচ্ছেদ যেনো তিক্ততার সৃষ্টি না করে, সম্মানজনকভাবে হয় সেটাই আল্লাহ্‌র কাম্য।
৫৫১৭। 'ইদ্দত' পালনের সময় কালে যদি বুঝা যায় যে, নারী গর্ভবতী সে ক্ষেত্রে 'ইদ্দত ' পালনের সময় তিন মাসের পরিবর্তে সন্তানের জন্মদান পর্যন্ত বিলম্বিত হবে। নূতন অতিথির আগমন পিতা মাতার মধ্যে মিলনের বন্ধন গড়ে তুলতে সক্ষম হতেও পারে। মোট কথা সন্তান জন্মগ্রহণের পূর্বে চূড়ান্ত বিবাহ বিচ্ছেদ সম্ভব নয়। আল্লাহ্‌ চান পুরুষ নারীর মাঝে পবিত্র বন্ধন যা বিবাহের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় তা যেনো হঠকারীতার মাধ্যমে ছিন্ন হয়ে না যায়। যদি সন্তান জন্মের পরও পিতামাতার মাঝে পূনঃ সর্ম্পক স্থাপন সম্ভব না হয়, নবজাতকের শুভ আগমনও যদি তাদের মাঝে তিক্ততা দূর করতে সক্ষম না হয়,তবে বিবাহ বিচ্ছেদের পরেও সন্তানের কল্যাণের জন্য মাতৃদুগ্ধ পান করার সম্পূর্ণ সময়টি পিতাকে মাতার ভরণপোষণ করার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। এই দায়িত্ব হচ্ছে পিতার প্রতি আরোপিত কর্তব্য। তালাকপ্রাপ্ত নারী সন্তানকে দুগ্ধ পান করাতে বাধ্য নয়, যদি সে পান করায় তবে পারিশ্রমিক নিতে পারে। ব্যাপারটি হবে পরস্পরের সমঝোতার মাধ্যমে। তবে এ ব্যাপারে তাদের উভয়ের মনোভাব এমন হওয়া উচিত নয় যাতে সন্তান মাতৃদুগ্ধ হতে বঞ্চিত হয়।
৫৫১৮। "তোমরা যদি তা কষ্টকর মনে কর।" এই বাক্যটি ইংরেজীতে অনূদিত হয়েছে এ ভাবে, "If ye find yourself in difficulties ." মাতৃদুগ্ধ সন্তানকে না দেবার অনেক কারণই ঘটতে পারে যথাঃ দুগ্ধের অপ্রাচুর্য, বা মাতা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন